জেলা প্রতিনিধি:
নদীর মাঝে দ্বীপের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মোল্লার চর। বিস্তীর্ণ এ চরের পূর্ব পাশে নাটোরের লালপুর ও পশ্চিম পাশে নদী পাড়ি দিলেই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা। তিন জেলার সীমান্তবর্তী মোল্লার চর এ অঞ্চলের মানুষের কাছে শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত।
পাশাপাশি এ চরে প্রায় ৩৫টি বাথানে প্রায় ৩ হাজার গরু-মহিষ পালন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ চর রাখাল, গোয়াল ও কৃষাণের পথচারণায় মুখর থাকে।
সরেজমিনে জানা যায়, এখানে চলে কৃষকের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এ চরে গম, ভুট্টা, মসুর, মটরশুটি, খেসারি, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি বোরো ধান ও আখ রোপণ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, সত্তরের দশকে মোল্লার চরজুড়ে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ছিল। স্কুল, মসজিদ, ঈদগাহ, মাঠসহ সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল। মোল্লার চর থেকে পদ্মা নদী ছিল এক কিলোমিটার পশ্চিমে। ধীরে ধীরে এ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এ গ্রামের বাসিন্দারা পাশের এলাকায় বসতি গড়েন। প্রায় ৪০ বছর পর আবারও পদ্মার বুকে মোল্লার চর জেগে ওঠে। এ চরে কেউ বসতি না গড়লেও গরু-মহিষের বাথানে প্রায় দেড় শতাধিক রাখাল ও গোয়াল অস্থায়ীভাবে বাস করে। জমির মালিকেরা নিজ নিজ জমিতে শুরু করে চাষাবাদ।
চরে বছরে দুবার আবাদ করা যায়। আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চর পানির নিচে ডুবে থাকে। চরের পানি নেমে গেলে আবারও চাষাবাদ শুরু হয়। পলিমাটির কারণে এ চরে আবাদের ফলন খুব ভালো হয়।
বালুদস্যুদের অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি গম, খেসারিসহ আবাদি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলমান থাকলে দুই-চার বছরের মধ্যে এ চর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সাঁড়া ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ চরে আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছেন। চরাঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে সরকারের একটি প্রকল্প আছে। এ চর সে প্রকল্পের আওতায় আনা হলে কৃষকরা বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা পেতেন। এতে তারা চাষাবাদে আরও বেশি উৎসাহিত হতেন। ফলন আরও ভালো হতো।’
কৃষক মখলেছ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘মোল্লার চরে চাষাবাদ শুরুর পর থেকে কৃষকরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। বাবা-দাদার হারানো সম্পত্তি আমাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু বালুদস্যুদের কারণে চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমার দুই বিঘা খেসারির জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছি। এভাবে চলতে থাকলে চর নদীগর্ভে আবারও বিলীন হয়ে যাবে।’
সময় জার্নাল/এলআর