গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:
ভারতে 'কথিত অনুপ্রবেশ' মামলায় দেশটির আদালত থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার খবরে গত বুধবার (১ মার্চ) রাতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছে
দলীয় নেতাকর্মীরা । গত মঙ্গলবার শিলংয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রায় ঘোষণার খবর বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় উল্লাস করতে থাকেন। এরপর তাঁরা আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরণ করেন।
বুধবার (১ মার্চ) বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসে, ভারতে অনুপ্রবেশ মামলায় দেশটির একটি আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। একই আদেশে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সংবাদটি বিএনপি নেতার নির্বাচনী এলাকা ও জন্মস্থানে পৌঁছলে বুধবার রাতে দলীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল বের করে। পরে জাতীয়তাবাদী দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পেকুয়া বাজারে পথচারী ও বাজারের সওদাগরসহ সর্বস্তরের লোকজনকে মিষ্টি বিতরণ করেন।
পেকুয়া উপজেলা যুবদল সভাপতি কামরান জাদিদ বলেন, দীর্ঘদিন পর পেকুয়ার কৃতি সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদ আইনি কার্যক্রম শেষে মুক্তি পেয়েছেন। দেশে আসতে তার আর বাধা নেই, এমন খবর পেয়ে আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। সেই উল্লাসে পেকুয়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছি। আশা করি খুব শিগগিরই প্রিয় নেতাকে বাংলার মাটিতে দেখতে পাবো।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ‘আত্মগোপন’ থাকা অবস্থায় রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৬২ দিন গুম থাকার পর ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরের গলফ কোর্স মাঠের পাশে অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি পুলিশের হেল্প লাইনে ফোন করলে পুলিশ প্রথমে তাকে থানায় ও পরে মিমহামস নামের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১২ মে বাংলাদেশে বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে সেখান থেকে সিভিল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিভিলে সপ্তাহখানেক রাখার পর তার অবস্থার অবনতি হলে শিলং-এর বিশেষায়িত হাসপাতাল নিগ্রিমসে ভর্তি করা তাকে। সুস্থ হওয়ার পর জামিন পেলে শিলং শহরের বিষ্ণপুর সানরাইজ গেষ্ট হাউজে অবস্থান করে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। দীর্ঘ ৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর বেকসুর খালাস পান তিনি। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলেও কয়েকদফা সময় পিছিয়ে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আদালতের রায়ে অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় পান তিনি।
এ রায়ের ৫ মাস পর মেঘালয়ের সরকার পক্ষে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। সর্বশেষ
এ আপিলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর আইনী লড়াই শেষে আবারো খালাস পান তিনি। এবার দেশে ফিরতে আর কোন আইনী বাধা নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৯৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসন প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর টানা ৩ বার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এসময় তিনি পেকুয়া প্রতিষ্ঠা সহ কক্সবাজার জেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেন। পরে ওয়ান ইলাভেনের সময় তিনি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সালাহউদ্দিন আহমদ গুম হবার সময় বিএপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন এবং শিলং নির্বাসনে থাকা অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
এমআই