দেব প্রসাদ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়িতে ককবরক (ত্রিপুরা ভাষা) ভাষাশহিদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার ৪৮ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে বসবাসরত ত্রিপুরাদের অন্যতম যুব সংগঠন বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব সংসদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা ছাত্র সংসদের যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি শহরের শান্তি নগরস্থ বানৌক রেস্টুরেন্টে মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে স্মরণসভার সূচনা করা হয়।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রনিক ত্রিপুরা। এসময় তিনি বলেন, "বাংলা ভাষার জন্য সালাম, রফিক, শফিকসহ অনেকেই এবং ককবরক ভাষার জন্য শহিদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরা জীবন উৎসর্গ করেছেন বলেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সৃষ্টি হয়েছে।" অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুব সংসদের সভাপতি হিরেন্দ্র ত্রিপুরা, সহ সভাপতি তনয় ত্রিপুরা, রুবেল ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক রূপক ত্রিপুরা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ৩রা মার্চ 'ককবরক' ভাষা শহিদ ধনঞ্জয় ত্রিপুরার ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য,বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্নদেশে বসবাসরত তিপ্রাসাদের মাতৃভাষা হলো ককবরক।'কক'মানে ভাষা আর বরক মানে মানুষ,সেই অর্থে ককবরক হলো মানুষের ভাষা।
১৯৭২ সালে ত্রিপুরা রাজ্য স্বাধীন ভারতের পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হলো বাংলা,কিন্তুু ত্রিপুরা রাজ্যের ভূমি সন্তানদের মাতৃভাষা ককবরক'কে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে মর্যাদা না দেওয়ার কারণে রাজ্যে 'ককবরক'ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আনন্দোলন শুরু হয়েছিল। এ আন্দোলনে নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন ধনঞ্জয় ত্রিপুরা।
তিনি মাতৃভাষা গুরুত্ব উপলব্ধি করে জনগণকে সচেতন করেন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ ত্রিপুরার জোলাইবাড়িতে 'ককবরক'ভাষার বিশাল সমাবেশে তিনিও অন্যান্যদের সাথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।তখন ত্রিপুরা রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন কংগ্রেস।মুখ্যমন্ত্রী সুখময় সেনগুপ্ত। আন্দোলনের গতি আচঁ করে সরকার জারি করে ১৪৪ ধারা।
শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায় পুলিশ। ধনঞ্জয় ত্রিপুরার বুকে পুলিশের গুলি লাগে । ঘটনাস্থলে শহিদ হন ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে ১৯ জানুয়ারি ত্রিপুরা রাজ্যসভায় 'ককবরক'ভাষা ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
যা বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে।সাম্প্রতিক বাংলাদেশের বসবাসরত ত্রিপুরারাও দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করে আসছে।
সময় জার্নাল/এলআর