সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
আধুনিকতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিলুপ্তপ্রায় মোরগ লড়াই ও লাঠি খেলা।
রবিবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ গ্রহন করে। ঢাক-ঢোলের বাজনায়, গানের তালে তালে এ যেন আনন্দময় উৎসব আয়োজন। ঢাক, ঢোলের তালে তালে চলে লাঠিয়ালদের কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা।
লাঠিখেলার পর পরই শুরু হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আরেক খেলা মোরগ লড়াই। মোরগ লড়াইয়ে দেখা যায়, দাগ কাটা বৃত্তের মাঝে মুখোমুখি দুটি বিশাল আকৃতির মোরগ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের ইশারা পেতেই পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। তারপরই শুরু হলো তুমুল লড়াই। একটি মোরগ তার মোটা দুটি পা দিয়ে প্রতিপক্ষ মোরগটিকে সজোরে আঘাত করছে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে একটি মোরগ ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল, যেন লড়বার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আর এভাবেই এক পর্যায়ে উপস্থিত দর্শকের হাত তালিতে শেষ হয় মোরগ লড়াইয়ের পর্ব।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এইসব আয়োজনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছিলো বাড়তি উন্মাদনা । বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এসব খেলার সাথে পরিচিত হতে পেরে তাদের ভীষণ উচ্ছ্বাসিত দেখা যায়।
লাঠি খেলা দেখতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী নোমান বিন হারুন বলেন, আমি প্রথম সরাসরি এ খেলা গুলো দেখলাম। ছোটবেলায় বইতে এ খেলাগুলোর কথা জেনেছি, কিন্তু টিভিতে কয়েকবার দেখা হলেও সরাসরি দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। আসলে এ খেলা গুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এ খেলাগুলো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় খেলাগুলো যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের সবার এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়াতুল মুনা বলেন, আমার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আর এ খেলাগুলো আমাদের জেলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন উৎসবে বা মেলায় এ খেলা গুলো দেখেছি। আর এখন আমার জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে পুরো জাহাঙ্গীরনগরকে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।
খেলার আয়োজকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যেভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছে, তার ফলে আমাদের যে গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি রয়েছে তা আমরা হারিয়ে ফেলছি। তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ খেলাগুলোর সাথে পরিচয় ঘটানোর জন্যই আজকে আমাদের এ আয়োজন।
এমআই