সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) টি-শার্ট বিতরণকে কেন্দ্র করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দুই গ্রুফের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুর ২টায় অনুষদ ভবনস্থ বাংলা মঞ্চে ব্যাচের অবতরণিকা উৎসব চলাকালীন সময়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে তিনজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রানা আহম্মেদ অভি, মুশফিকুর রহমান ও সাব্বির রহমান শাওন।
জানা যায়, অবতারণিকা উৎসবের টি-শার্ট
বিতরণের দায়িত্ব ছিল ভূক্তভোগী মুশফিকের। মুশফিক সবাইকে টি শার্টের সংখ্যা গুণে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসিন ইসলাম রাহিন তাকে না বলেই এলোমেলোভাবে টি-শার্ট দিতে গেলে মুশফিক তাকে বাঁধা দেন৷ এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। তখন সিনিয়র ও বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়। পরবর্তীতে দুপুর ২টায় বাংলা মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালে এই ঘটনার জের ধরে রাহিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের রাব্বি ফকির ও ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মোবারক হোসাইন আশিকের নেতৃত্বে প্রায় ৩৫/৪০ জন ভূক্তভোগীদের উপর হামলা করেন। লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকেন। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের ডা. এস এম শাহেদ হাসান বলেন, ' তিনজনকে মেডিকেলে আনা হয়। লাঠি দিয়ে মারার ফলে একজনের মাথায় এবং বাকি দু'জনের ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার বিষয়ে ভু্ক্তভোগী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রানা আহম্মেদ অভি বলেন, 'সকালে টিশার্ট বিতরণ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সমস্যা হয়। এ নিয়ে তারা প্রায় ৩৫/৪০ জন হামলা চালিয়ে আমার সহপাঠী মুশফিকুর রহমান ও সাব্বির শাওনকে লাঠিসোটা ও বাঁশ দিয়ে পেটাতে শুরু করে। আমি মুশফিকুর রহমানকে ঠেকাতে গেলে আমার উপর হামলা করেন হামলাকারীরা। আমি সবাইকে চিনিনা, প্রথামিকভাবে যে তিনজনের নাম অভিযোগে উঠে এসেছে এদের শুধু চিনি।
আহত শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, 'অনুষ্ঠান চলাকালীন হুট করে ওরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত আক্রমণ করে। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা বাঁশ ও লাঠি দ্বারা আমাদের মারধর করে পালিয়ে যায় । এই হামলা পুরোপুরি পূর্ব পরিকল্পিত। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।'
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসিন ইসলাম রাহিন বলেন, 'আমাদের ব্যাচমেটদের মধ্যে বেশকিছু বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। তবে অতর্কিত হামলা বা তাদেরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আক্রমণ করা হয় নি।'
আরেক অভিযুক্ত ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন আশিক বলেন, 'মারামারির সময় আমি ফুটবল মাঠে ছিলাম। পরে ঝামেলা হতে দেখে সেখানে এগিয়ে যাই। এ ঘটনায় আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। কেনো আমার নাম জড়ালো আমি নিজেও বুঝতেছিনা।'
এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম বলেন, 'আমি ওই সময়ে ওদেরকে দেখতে মেডিকেলে গিয়েছিলাম। যা যা ব্যবস্থা করা দরকার করেছি। লিখিত অভিযোগের একটা সফট কপি হোয়াটসঅ্যাপে পেয়েছি। এটা প্রক্টরকে ফরওয়ার্ড করেছি। তবে এখনো তিনি কোনো সিদ্ধান্ত জানান নি। আমরা পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে এটা জানাবো।
উল্লেখ্য, এর আগেও ব্যাচ ডে উদযাপন নিয়ে নিজেদের মধ্যে গ্রপিং করে সাদ্দাম হলের সামনে হাতাহাতির সময় সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
এমআই