ডা. মাহমুদুর রশিদ :
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাই।বাংলাদেশে বর্ষা এবং শীতকাল বলতে গেলে অনুভবের আগেই শেষ হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মকালই বলা চলে ব্যপক ভাবে অনুভূত হয়।
চিকিৎসা পেশায় আমার দীর্ঘ ক্লিনিকাল অভিজ্ঞতা বলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শতকরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীকেই ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা দিতাম। ২০২০ সাল থেকে সেই ফ্লু ধরা দিল করোনার ১ম ঢেউ আকারে।
সারা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা খাতের করুন দশা প্রকাশ পেল এবং যখন তা সহনীয় মাত্রায় আসতে শুরু করলো। আমরা তখন সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা এবং তা মোকাবিলার জন্য কর্ম পরিকল্পনা না করে কেবল মাত্র কয়েক লক্ষ ডোজ করোনা ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আছে এমন আত্মবিশ্বাসী কথা বলতে সবে শুরু করেছিলাম।
করোনার মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার করে আমাদের অসহায়ত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে।
করোনা পৃথিবী থেকে কবে নির্মূল হবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন-তাই বলে আমাদের বসে থাকার উপায় নেই। জলবায়ুর এমন আচরণ অব্যাহত থাকলে করোনা ভাইরাস দিনে দিনে তার এই রূপ পাল্টে আরো ভয়ংকর রূপ ধারন করতে পারে।
সেজন্য করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য যা করণীয়
১. দ্রুত সকল নাগরিকের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. যে সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের করোনা মোকাবিলায় নূন্যতম সক্ষমতা আছে সেটিকে শতভাগে উন্নিত করতে হবে।
৩. জনবল বৃদ্ধিসহ বিদ্যমান স্বাস্থ্যকর্মীদের সকল ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রত্যেক বিভাগে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
৪. প্রত্যেক বিভাগে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
৫. স্বাস্থ্যসেবাখাতে দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির আওতায় এনে গুড গভার্নস চালু করতে হবে।
৬. সরকারি ক্রয় কাজে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরোশনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৭. ৮০-এর দশকের পুরোনো কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন অবকাঠামোর হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।
৮.মাঠপর্যায়ে সমপদমর্যাদার একাধিক প্রশাসনিক পদ তৈরি করতে হবে।
৯.জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে কৃষি অর্থনীতি যেন ভেঙে না পড়ে সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
১০. ছাত্র-ছাত্রীদের দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা পরিকল্পনাবিদদের কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
১১.করোনা নিয়ে সমাজের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।