সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের কথোপকোথনের একটি অডিও ক্লিপের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম এ কমিটি গঠন করেন। উপাচার্যের একান্ত সচিব মনিরুজ্জামান মোল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কণ্ঠ সদৃশ একটি অডিও ছড়িয়ে পরার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপাচার্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক ও উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরআগে, অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি করে দেখার দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে ‘সাথী খাতুন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি হতে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের চারটি কল রেকর্ডের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। অডিওতে অপর পাশ থেকে বলতে শোনা যায়, আমি মঈন (ইসিএল থেকে)। স্যার আজকে ওটা জমা দিয়ে দিলাম, কালকে ওই টাকাটা ক্যাশ হবে। কোথায়, কখন প্রেস করবো বললে সেভাবে প্রিপারেশন নিতাম। রেজিস্ট্রার তাকে ৩টার সময় দিতে বললে অপরপাশ থেকে সাড়ে ৪টায় দিবে বলে রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়। এসময় জনৈক মঈন ৪ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করলে রেজিস্ট্রার তাকে বলেন, 'ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই।’ এরপর মঈন- ‘সমস্যা হবে না’ বললে আবারো রেজিস্ট্রার ফোনে এসব কথা বলা যাবে না বলে সতর্ক করেন।
পরে দ্বিতীয় কলে মঈন বলেন, ওটা ৪ টার দিকে মনে হয় পাবেন। তখন তাকে আবারো ফোনে না বলার জন্য সতর্ক করা হয়। এসময় ঠিকাদার শুধু ইঙ্গিতে কথা বলে রেজিস্ট্রারকে আশ্বস্ত করেন। পরের কলে রেকর্ডে রেজিস্ট্রার টাকার বিষয়ে কাজ হয়েছে কিনা ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ব্যাংকে আছেন বলে জানান।
এভাবে বিলম্ব হতে থাকলে রেজিস্ট্রার তাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ কল রেকর্ডে রেজিস্ট্রার টাকার অবস্থা ও কতক্ষণ লাগবে জানতে চাইলে আর আধাঘন্টা লাগবে বলে অপেক্ষা করতে বলা হয়। রেজিস্ট্রারকে বলেন, ‘আর বইলেন না, ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে যে করাইছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আপনারা চেক দিয়েছিলেন এটা মেনুয়্যাল চেক। রেজিস্ট্রার তার অবস্থান জানতে চাইলে বলেন, ‘অল্প একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। ব্যাগে ভরতেছি।’
অডিওটি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) ও প্রকল্প পরিচালক থাকা অবস্থায় ঠিকাদারদের সাথে অর্থ লেনদেনের বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে অডিও ফাঁস হওয়ার পর অডিওতে কন্ঠটি তার নয় বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। এটা এডিট করা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি। জিডিতে বলা হয়, ‘আমার কন্ঠসদৃশ একটি কথোপকথনের অডিও সাথী খাতুন নামের ফেইক আইডি থেকে ভাইরাল করা হয়েছে। ভাইরাল অডিওর বিষয়ে এ ধরনের কোনো আর্থিক লেনদেনের আলাপ পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক থাকা অবস্থায় হয়নি। ভবিষ্যতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য কুচক্রী মহল এ ধরনের জঘন্য ঘটনার আরও প্রয়াস চালাতে পারে।'
এমআই