মিজান মালিক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একদিকে যেমন একে অন্যের সাথে বন্ধন দৃঢ় করতে পারে, আবার বোঝার ভুলে বা অযাচিত কথাবার্তায় সম্পর্কে টানাপোড়েন হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এক দুটো ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমেকে কেউ কেউ এক হাত দেখানোর চেষ্টা করছেন। বলছিলাম অতি সাম্প্রতিক সময়ের কথা। সবাই জানি, কোন দুটি ইস্যু বেশি আলোড়িত।
সাংবাদিকদের নিয়ে নেতিবাচক বলতে গিয়ে একজন অতি উৎসাহী দেখলাম একটা গেঞ্জির ডিজাইন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছে। ওখানে যা লেখা আছে, কারো জন্মের ঠিক থাকলে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না। গণমাধ্যমের তরফ থেকে ওই অতিউৎসাহীর পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তথ্য প্রযুক্তি আইন তো আছে।গেঞ্জি ডিজাইনে অত্যন্ত নোংরাভাবে যা বলা হয়েছে, তার মূল কথা হলো, লাখে একজন ভালো সাংবাদিক। বাকিরা....
আরে, ফেসবুকার অথর্ব, তুমি কতজনকে চেনো! কতজন সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো কাজ করে তার কতটুকু তুমি জানো! কতজন সাংবাদিক দিনে কতটুকু পরিশ্রম করে কতটুকু জানো! কতজন সাংবাদিক নিষ্ঠার সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন তার কতটুকু জানো। কতজন পেশাদার সাংবাদিক নিয়মিত বেতন না পেয়েও নীতি থেকে বিন্দু সরেননি তার কতটুকু জানো। তুমি অনেক কিছুই জানো না। তুমি মনে করো তোমার মন মতো এটা হলো না, ওটা করলো না, তাই সব খারাপ!
কোনো গণমাধ্যমের কাজ নিয়ে তো সাংবাদিকরা নিজেরাই কথা বলছে। কোনো আলোচিত ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট আসুক সাংবাদিকরাই তো চান। তুমি একজন পাঠক। কিংবা দর্শক। তোমাকে তো গণমাধ্যমের বিচার করতে কোনো পদে বসানো হয়নি। বলে দিলে যাচ্ছে তাই। তার মতো এমন অনেক অতি উৎসাহী আছেন, সুযোগ বুঝে এক হাত দেখাচ্ছেন। আবার ঠেকে বসে গণমাধ্যমের কাছে এসে সমস্যার কথাও জানাচ্ছেন।
সকলেই জানেন, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মূল ধারার সংবাদকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। বাস্তবতা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। গণমাধ্যম সব সময় দেশ ও দশের কাছে দায়বদ্ধ। সকালে আপনার হাতে যে পত্রিকাটি পৌঁছে,তার প্রতিটি শব্দের সাথে সাংবাদিকদের শ্রম ঘাম কষ্ট লেগে থাকে। প্রতিটি সংবাদের দায় সাংবাদিক কিংবা কর্তৃপক্ষকে নিতে হয়। একইভাবে টেলিভিশন বা অনলাইন নিউজ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাজটি একজন ফেসবুক ইউজার বা ওই গেঞ্জির ডিজাইনার করেন না। দিন শেষে, মানুষের দুঃখ কষ্ট, ভোগান্তি, হয়রানি,নির্যাতন, অধিকার, বঞ্চনার কথা সাংবাদিকরাই তুলে আনেন।
সেই সংবাদ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে গেলে তাও সাংবাদিক বা কর্তৃপক্ষকে মোকাবেলা করতে হয়। তার কতটুকুই বা আপনি জানেন। সাংবাদিকদের কারনেই আড়ালে পড়ে থাকা বড় বড় ঘটনা সামনে আসে। অপরাধীদের বিচার হয়।
দুদকের পরিসংখ্যান বলছে, শতকরা ৮০ ভাগ দুর্নীতির অভিযোগ তারা গণমাধ্যমের কাছ থেকে নেন। সাংবাদিকরা অনেক প্রতিকূল পরিবেশেও দুর্নীতির রিপোর্ট করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব অবস্থান নিচ্ছেন। জনগণের মনের ইচ্ছে যে সাংবাদিকরা টের পাননা তা নয়। তাদের মনোবেদনার বহিঃপ্রকাশ গণমাধ্যমকে দোষারোপ করে করলে হবে না। সব কিছু গণমাধ্যম করে দেবে- এমনটিও নয়। যার কাজ তাকে করতে হবে। অন্যদেরও ব্যর্থতা আছে। সেগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন। যাদের আপনি আপনার এরিনা বা কাছের মনে করেন।
সাংবাদিকরা তাদের কাজ করুক। রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা- দুটোকে সমন্বয় করেই এখনো গণমাধ্যম তার কাজটি করছে।
হ্যা, আপনার আশে পাশে যদি দেখেন কোনো প্রতারক একটি আইডি কার্ড ব্যবহার করে কাউকে হয়রানি করছে, তার পরিচয় নিশ্চিত হোন। সন্তুষ্ট না হলে পুলিশের হাতে তুলে দিন। কোনো ভুঁইফোড় অনলাইনের কথিত সাংবাদিকের জন্য মূল ধারার সাংবাদিকদের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করবেন না। ভুইফোঁড়দের কারণে পেশাদার সাংবাদিকরা নিজেরাও বিব্রত। সবাই আপনারা সচেতন। আসল নকল চেনার সক্ষমতা আছে। দেশ-দশের স্বার্থে পাশে থাকুন। কাছে রাখুন।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
এসজে/আরইউ