সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা : বিভাজনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সফল রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য ইতিবাচক রাজনীতি সূচনার স্বপ্ন নিয়ে জন্ম নেয়া নতুন রাজনৈতিক দল এবি পার্টি পথ চলার এক বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
রোববার (২ মে) সকাল ১১টায় এবি পার্টির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। দলের আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠানে এবি পার্টির জন্মদিনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রেকর্ডেড ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন- মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, সাবেক ডাকসু ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতিক, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি, সাবেক উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার মিলন, লেখক ও কলামিস্ট শ্রী গৌতম দাস, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মাওলানা ড. মো. নজরুল ইসলাম আল মারুফ, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ড. সুকোমল বড়ুয়া, শিল্পী ও অভিনেত্রী আরজুমান্দ আরা বকুল প্রমূখ।
ব্রিফিং এ দলের আহবায়ক ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাপী মহাক্রান্তিকালের মধ্যেই গত বছরের এই দিনে আমাদের পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। দল ঘোষণার পূর্ব থেকে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতির এই দূঃসময়ে আমাদের এই দল ঘোষণা কোনোক্রমেই সাধারণ বিষয় ছিল না।
সাবেক এই সচিব ও রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আরো বলেন, যখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে সাংবিধানিক রাজনীতির সকল পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, নির্বাচনের নামে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে জনগনের সাথে প্রতারণা ও তামাশার উৎসব চালু করা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দমন পীড়নের মাধ্যমে ভীত সন্ত্রস্থ ও রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে, যখন রাজনীতি নিয়ে মানুষের মাঝে ভয়, শংকা ও চরম অনীহা বিরাজমান তখন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশ, জাতি ও নতুন প্রজন্মকে কল্যাণরাষ্ট্র ও রাজনীতির নতুন অভিমুখ দেখানোর দুঃসাহসিক লক্ষ্যেই এবি পার্টি তার আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে আমাদের এতটা সাহস সঞ্চার করতে হবে যে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। এই অন্যায়, অবিচারকারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের কি এতগুলি বুলেট আছে যে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে! কিছু লোক মারতে পারবে, আমাদের কিছু লোকের আত্ম ত্যাগে যদি দেশে পরিবর্তন হয় এরচেয়ে বড় সফলতা আর কি হতে পারে? জয় আমাদের হবেই। আমাদের সাহস লাগবে, ভীতু ব্যক্তিদের মৃত্যু তাদের মৃত্যুবরণ করার আগেই হয়ে যায়। পরিবর্তন চাই, পরিবর্তনের জন্য সবাইকে সাহস সঞ্চয় করা দরকার।
এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের যে প্রতিশ্রুতি স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে দেওয়া হয়েছে, জনগণের জন্য তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের মাধ্যমে এবি পার্টির যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলামে এই তিনটি অধিকারের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মারামারি, হানাহানি ও বিভাজনের রাজনীতি "তারা এবং আমরা" এই দুই ভাগে জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এবি পার্টির সংগ্রাম এই বিভাজনের বিরুদ্ধে। একটি সফল রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য এক নতুন রাজনীতির সূচনা করতে যাচ্ছে এবি পার্টি। এ দলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অর্জন আছে অনেক, কিন্তু ব্যর্থতার ফিরিস্তিও বেশ লম্বা। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নেই। এবি পার্টিকে যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে ঠিক তেমনি দলের ভিতরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ শুধু মাত্র গণতন্ত্রই বিপন্ন নয়, আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বও বিপন্ন। আজকের বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য দরকার একদল নারী ও পুরুষের এবং একজন রাষ্ট্র নায়কের। বলা বাহুল্য এই মূহুর্তে জাতীর মধ্যে সেই রাষ্ট্র নায়ক নেই। কিন্তু এবি পার্টির নেতৃত্ব সম্মিলিতভাবে এই অভাব পূরণ করতে পারবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক আরো বলেন, এবি পার্টিকে রাজনীতিতে পেশাদারিত্ব আনতে হবে। এবি পার্টিকে অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী তার ধারণকৃত শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমার এবি পার্টিকে দেখে মনে হয়েছে যে তার নরডিক দেশগুলোর আদলে দেশকে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এবং এই উদ্যোগ যদি সফল হয় তাহলে তা এদেশের জন্য এক যুগান্তকারী ঘটনা হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির এক বছর পূর্তি এটা আমাদের দেশের জন্য খবুই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বিগত পঞ্চাশ বছরে যে রাজনীতির ধারা দেখা গিয়েছে, এতে জনগণ অনেকটা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে- রাজনীতির উপর, রাজনীতিবিদদের উপর। এই নতুন পার্টির আগমণে একটি ঘাটতি পূরণ হবে। এই সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অবক্ষয় হয়েছে। তবে উদার ও গণতান্ত্রিক একটা কালচার বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে এবং আমি এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সাথে কথা বলে এটা বুঝেছি যে, তাদের চিন্তাধারা হলো তারা একটি উদার গণতান্ত্রিক সিস্টেমে তারা কাজ করবে সেভাবে তারা তাদের দল পরিচালনা করছে, হয়তো তারা একদিন দেশও পরিচালনা করবে। করার একটি সুযোগ আছে যে, এবি পার্টি অধিকার ভিত্তিক দল, তারা মানুষকে তাদের অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনগণের অধিকার রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি এবি পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর খবর শুনে আনন্দিত। এবি পার্টি গত এক বছর লাগাতার কাজ করেছে। দেশের আপামর মানুষের জন্য, গণতন্ত্র, তাদের মৌলিক অধিকার এক কথায় মানুষের কল্যাণের স্ব-পক্ষে তারা লড়াই করেছে। আমার বাংলাদেশ পার্টি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেন, এবি পার্টি কভিড-১৯’র সময় জন্ম নিয়েছে সাহস করে; এবি পার্টি নতুন দল হলেও নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগুলো নতুন নয়, তারা প্রবীণ ও অভিজ্ঞ। আমি এবি পার্টির কাছে আবেদন করবো তরুণদের ধরে রাখুন, তরুণ পেশাজীবিদের রাজনীতিমনস্ক করুন, তাদেরকে রাজপথে আনুন বা সম্মেলন কক্ষে রাখুন, অথবা তাদের মিডিয়াতে বক্তব্য দিতে সুযোগ করে দিন, কারণ তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জনাব গৌতম দাস বলেন, এবি পার্টি একটি রিপাবলিক দল বলে আমি মনে করি, এবি পার্টি একটি রিপাবলিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এবি পার্টি তার জন্য যে তিনটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছে তা একটি রিপাবলিক রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এবি পার্টিতে আইন পেশার লোক বেশি রয়েছে যারা সংবিধান যথাযথ জানবেন এবং সে হিসেবে কাজ করবেন বলে আমি মনে করি। এবি পার্টি কেমন রাজনীতি করবে কেমন দেশ তারা চায় তা স্পষ্ট। এই স্পষ্টতার জন্য এবি পার্টি সফল হবে এগিয়ে যাবে।
সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, একটি সুস্থ রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকার ছিল সেটাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে অর্থাৎ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক মুক্তি সম্পন্ন বাংলাদেশ, সুবিচারের বাংলাদেশ, সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবি পার্টি গঠিত হয়েছে। আজকে দ্বি-দলীয় রাজনীতির বৈরী অবস্থানের কারণে জনগণ একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি চায়। সে শক্তি জনগণের সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, আমি আশা করি এবি পার্টি বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের পাশে, গণতন্ত্রের পাশে, নারী জাগরণের পাশে হাজার বছর ধরে থাকুক। আমি এবি পার্টির তরুণ নেতৃত্বের মাঝে যে স্ফুলিঙ্গ দেখেছি, সে স্ফূলিঙ্গ বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।
একুশে পদক প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, এবি পার্টি অতীতের মত করে গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গি না রেখে এমন কতগুলো বিষয়কে সামনে এনেছে যেগুলো জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, জনগণের জন্য কল্যাণমূলক, রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন। দল বা রাষ্ট্র যদি কল্যাণমূলক না হয় তাহলে সে রাষ্ট্র কখনও জনগণের সেবা করতে পারবে না।
বাংলাদেশ জামিয়াতুল মুদাররেসিনের সহকারী মহাসচিব ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল ফারুক মাদানী বলেন, এবি পার্টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, ধর্মকে ধারণ করে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করার চিন্তা করছে; আমি এবি পার্টির সাফল্য কামনা করছি।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জুর সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সভায় আরো উপস্হিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ডা. মেজর (অব:) আব্দুল ওহাব মিনার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, বিএম নাজমুল হক, সহকারী সদস্য সচিব এ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, ব্যারিস্টার সানি আব্দুল হক, আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তর সমন্বয়ক নাজমুল হুদা অপু, মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক এএফ ওবায়দুল্লাহ মামুন, শাহ আব্দুর রহমান, এম. আমজাদ খান, এড. সাঈদ নোমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকীব, মিনহাজুল আবেদীন শরীফ, আফ্রিদ হাসান তমাল, আব্দুল হালিম নান্নু, আব্দুল জলিল, রেখা আক্তার, কামাল হোসেন, বদরুল হুদা প্রমুখ।
বিকেলে বর্ষপূর্তির কর্মসূচি হিসেবে দলীয় কার্যালয় সম্মুখস্থ চত্বরে রোজাদারদের সম্মানে গণ-ইফতারের কর্মসূচির আয়োজন করেছে দলটি।
সময় জার্নাল/এসএ