শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় চুরির অভিযোগে সোহান মিয়া (১৪) নামের এক কিশোরকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৫ এপ্রিল) ভোর সকালে উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের জামিরবাড়ি এলাকার তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সামছুল হক ভোটমারী ইউনিয়নের ৯নং জামিরবাড়ি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোহানের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ৫-৬ মাস বয়সী সোহানকে রেখে নিখোঁজ হন। এরপর তার বাবাও বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। পরে মামা আনিছার রহমান সোহানকে নিজের কাছে রাখেন। বর্তমানে সোহান কখনো গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করে আবার কখনো ঘাস বিক্রি করে।
রোববার (২ এপ্রিল) গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল সোহান। ব্যাঙ্গেরহাট এলাকায় পৌঁছালে টিউবওয়েলের একটি সকেট রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাতে নেয় সোহান। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল, ইসমাইলের ছেলে ওহাব মিয়া, সুভাসের ছেলে তাপস ও আজিজুলের ছেলে রানা মিয়াসহ কয়েকজন তাকে চোর সন্দেহে আটক করেন।
পরে পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে সোহানকে রশিতে বেঁধে মারধর করেন তারা। একপর্যায়ে প্লায়ার্স দিয়ে তার শরীরের চামড়া টান দেন। এছাড়া সোহানকে বাঁশের ডলা (দুই বাঁশ দিয়ে শরীর চেপে ধরা) দেয় নির্যাতনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা কেউ একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে খবর পেয়ে কিশোর সোহানের মামা আনিছার রহমান ভোটমারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত সোহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে ভর্তি আহত সোহান মিয়া বলে, রাস্তায় পড়ে থাকা টিউবওয়েলের একটি সকেট আমি হাতে নিই। ওই সময় আমাকে কয়েকজন চোর আখ্যা দিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে। আমি চুরি করিনি, এ কথা বলার পরও হাত-পা বেঁধে প্লায়ার্স দিয়ে তারা আমার শরীরের চামড়া টেনেছে। এমনকি তাদের হাতে-পায়ে ধরলেও ক্ষমা না করে বাঁশ দিয়ে ডলা দিয়েছে। আমার নানি ও মামা ছাড়া কেউ নেই। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।
সোহানের মামা আনিছার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ব্যাঙ্গেরহাট এলাকার ইসমাইল হাজীর ছেলে ওহাব মিয়া, স্কুলশিক্ষক তাপস কুমার ও রানা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাছের ঘেরে নিয়ে আমার ভাগনের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। আজ ভোরে আসামি ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানতে পেরেছি। পুলিশকে অনেক ধন্যবাদ। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম গোলাম রসূল জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে।’
সময় জার্নাল/এলআর