নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে বাসসহ গণপরিবহন চালুর দাবি উঠলেও আন্তজেলা বাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সেই সঙ্গে বলেন, শহরের মধ্যে খুলে দেয়া হবে গণপরিবহন।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তজেলা পরিবহন বন্ধ থাকবে। শহরের মধ্যে গাড়ি খুলে দেয়া হবে। নৌ পরিবহন বন্ধ থাকবে। সীমান্ত বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আকাশ পরিবহন বন্ধ থাকবে।’
ঈদের কেনাকাটায় শপিংমল ও দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে এসব বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
‘দোকানপাট ঈদ পর্যন্ত খোলা থাকবে। যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়, তবে বন্ধ করে দেয়া হবে। জরিমানা করা হবে। এসব সিদ্ধান্ত ঈদ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তারপর অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত আসবে।’
গণপরিবন চালুর পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে একই কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর মধ্যে গণপরিবহন চলতে পারে। কিন্তু জেলা থেকে জেলায় গণপরিবহন চলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সুপারিশে দেশে লকডাউন চলছে। এপ্রিল মাসে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি থাকলেও এখন কিছুটা কমে আসছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আরও কিছুদিন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।’
দেশব্যাপী বাসসহ গণপরিবহন চালুর দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভের পরের দিনই এমন পরিকল্পনা আসছে সরকারের তরফ থেকে।
পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করতে রোববার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়। মঙ্গলবারের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে গণপরিবহন চালু না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকনেতারা।
পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো:
০১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
০২. সড়ক পরিবহনশ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।
০৩. সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহনশ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রমিকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দেশে দোকানপাট, অফিস, কারখানাসহ সবই সচল। চলছে না শুধু গণপরিবহন। আর এতে এই খাতে জড়িত ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে বারবার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু চালু হয়নি। আমাদের এখন না খেয়ে মরার অবস্থা। আমাদের শ্রমিকরা গত ২০-২৫ দিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করব, গণপরিবহন চালু করে দিন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাব।’
গণপরিহন চালুর দাবিতে ৪ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
গত ২৪ এপ্রিল এক মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে সরকার গণপরিবহন চালুর সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।
মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর এত দিন চুপ ছিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কিন্তু ২৮ এপ্রিল লকডাউনের মেয়াদ আবার বাড়িয়ে গণপরিবহনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই পরিবহন চালুর দাবি জানাতে শুরু করে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।
সময় জার্নাল/আরইউ