আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরই অনেক নারীই তার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলেছিলেন। তবে সবাই সেই দৌড়ে টিকে থাকতে পারেননি। কিন্তু পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসই তাকে শেষ পর্যন্ত আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা রেকর্ড যে কোনো সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টকে এমন ফৌজদারি অভিযোগের মুখে পড়তে হলো।
এই রেকর্ড গড়ার জন্য মূলত দায়ী স্টর্মি এবং ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তিনিই মূলত এই মামলার রাজসাক্ষী। অভিযোগ গঠনের পর গত মঙ্গলবার ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হয় এবং মুক্তিও দেওয়া হয়। ৪ ডিসেম্বর মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক। এখন আলোচনা শুরু হয়েছে যে, এই মামলা থেকে রিপাবলিকান ট্রাম্প, নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লাভবান হবেন।
প্রাইমারি নির্বাচনে এগিয়ে থাকলেন ট্রাম্প
গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প ইতিমধ্যে ৮০ লাখ ডলার চাঁদা পেয়েছেন বলে তার প্রচারণা শিবির জানিয়েছে। বিভিন্ন জনমত জরিপের তথ্য উল্লেখ করে ট্রাম্প শিবির জানাচ্ছে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা তার বেড়ে গেছে। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়তার দৌড়ে তিনি এগিয়ে গেছেন। অনেকের মনে হতে পারে, এটা ট্রাম্প শিবির বানিয়ে বলছে। কিন্তু ট্রাম্পের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তারাই ট্রাম্পের পক্ষে কথা বলছেন। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, রিপাবলিকানরা এটাই শুনতে পছন্দ করছেন এখন। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর রান দ্য সান্তিস (যাকে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দেখা হচ্ছে) বলেছেন, বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক এজেন্ডা চরিতার্থ করলে আইনের শাসন নষ্ট হবে। ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, এই মামলা বাকি বিশ্বের কাছে মার্কিন বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ভয়াবহ বার্তা দেবে। ফলে রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারি অর্থাত্ প্রার্থী নির্বাচনে ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আসা এই মামলাকে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ ঐ ভোটে ভোট দেবেন রিপাবলিকান সমর্থকরা। সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, রকেটে জ্বালানি দিলে যে গতিতে চলে এই মামলা ট্রাম্পকেও সেই গতিতে সামনের দিকে নিয়ে যাবে।
ট্রাম্পের আতঙ্ক, ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুবিধা
অনেক বিশ্লেষক সন্দেহ করেন মূল নির্বাচনের ভোটে মামলাকে কাজে লাগানোর কৌশল তার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। পোলিং ফার্ম নর্থ স্টার ওপিনিয়ন রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং জিওপি কংগ্রেসনাল এবং গবারনেটর প্রার্থীদের উপদেষ্টা হুইট আইরেসের মতে, এই মামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে এমন কোনো জরিপ কিন্তু নেই। কারণ মার্কিন ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা মামলাটি নির্বাচনে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে মনে হয় না। বরং ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় তার উসকানির ঘটনা হয়তো মূল নির্বাচনে ট্রাম্পকে পেছনের দিকে নিয়ে যাবে। গণতন্ত্রবিষয়ক কৌশলবিদ সাইমন রোজেনবার্গ। তিনি ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তার মতে, ট্রাম্প হয়তো প্রাইমারিতে সুবিধা করতে পারেন। কিন্তু মূল নির্বাচনে তাকে এই মামলা নিয়ে ভুগতে হবে। ট্রাম্পের স্লোগান ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ তিনটি নির্বাচনে ভালো ফলাফল দিতে পারেনি। লড়াইয়ের মাঠে এটি কাজে আসছে না। সাইমনের মতে, রিপাবলিকানরা যদি এই ‘মেগা’ নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পাওয়াটা খুবই কঠিন হবে।
ওহাইও-ভিত্তিক রিপাবলিকান কৌশলবিদ ম্যাট ডোলের মতে, এই মামলা দীর্ঘ মেয়াদে ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলবে। প্রাইমারি নির্বাচনেও তাকে ভুগতে হবে। এখন হয়তো রান দ্য সান্তিস দলের প্রয়োজনে মামলার বিপক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু প্রাইমারিতে প্রচারণা শুরু হবে তখন কিন্তু তিনি ঠিকই ট্রাম্পের মামলা নিয়ে কথা বলবেন। মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত উল্লেখ করে ম্যাট ডোলে বলেন, ট্রাম্পকে যারা এখন সমর্থন করছেন তারাও হয়তো ভবিষ্যতের প্রচারণায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারণায় মামলার বিষয়টি উল্লেখ করবেন। তাই এখনো অনেকটা সময় বাকি বলে মনে করেন ডোলে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ট্রাম্পের জন্য যা ইতিবাচক তা ডেমোক্র্যাটদের জন্য নেতিবাচক। আর যা ট্রাম্পের জন্য নেতিবাচক সেটাই সুফল বয়ে আনবে ডেমোক্র্যাটদের জন্য।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে জানা যাচ্ছে। তবে সামনের দিনগুলোতে তার জনপ্রিয়তা বাড়বে না, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইতিমধ্যে তার কয়েক জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও তারা বলেছেন, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তারা সবাই সরে দাঁড়াবেন। কারণ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা অবশ্য বলেছেন, শিগিগরই প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রচারণায় নামবেন।
এমআই