শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু অফিসের চেয়ার থেকে উঠে এসে যে বোতল নিয়েছিলেন সেটি ফেনসিডিল ছিল বলে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মাহবুবা আইরিন। মঙ্গলবার হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে সরকারি অফিসে বসে আনোয়ার হোসেন মিরুর মাদক গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হয়। বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। অফিসে বসে মাদক গ্রহণের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন মিরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঘটনা তদন্তে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদে আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি হাতীবান্ধা ছুটে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু, মাদক কারবারি ইউসুফসহ উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলেন তিনি। ওই সময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরুর বাল্যকালের বন্ধু ও মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ বলেন, ‘হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিরু আমার বন্ধু। তাই তার শারীরিক সমস্যার কারণে মধুর বোতল দিয়েছি।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে- কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া মোবাইলে ধারণ করা দুই মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন মিরু নিজের চেয়ার থেকে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে তখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বসে ছিলেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে তিনি সোজা চলে যান টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সোফার কাছে বসা লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তির সামনে। কিছু সময় পর লুঙ্গির ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ফেনসিডিলের বোতল মিরুর হাতে তুলে দেন ওই ব্যক্তি। মিরু কিছুটা আড়াল করে সেই বোতল নিয়ে আবারও ঢুকে পড়েন টয়লেটে।
ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে যিনি ফেনসিডিলের বোতল দিয়েছেন তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের কানিপাড়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে ইউসুফ। যার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করেন।
অভিযুক্ত হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যন আনোয়ার হোসেন মিরু বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছি। তবে আমার মাথায় আসছে না কীভাবে প্রাথমিক সত্যতা তদন্ত বিভাগ পায়। আমি তো মাদক খাই না, তাহলে কীভাবে তদন্ত বিভাগ বিষয়টির সত্যতা পায়। আমি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জবাব দেব।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, সকালে কারণ দর্শানোর একটি অনুলিপি আমরা পেয়েছি। যেটিতে মাদক সেবনের বিষয়টি প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর