সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঈদুল ফিতর : কুরআন নাযিলের বার্ষিকীর উৎসব

মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
ঈদুল ফিতর : কুরআন নাযিলের বার্ষিকীর উৎসব

ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক:

ঈদ মানে খুশি, আনন্দ এই আনন্দ কিসের, এই আনন্দ হলো কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালনের সাফল্যের উৎসব, আনন্দ উৎযাপন। কারণ রামাদান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষকে তার ক্ষণিকের পার্থিব জীবন শেষে অনন্তকালীন মহাশান্তির জান্নাতে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। সেই কুরআনের বার্ষিকী রমাদান, সেই বার্ষিকী পালনের সাফল্যের আনন্দ মহা উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। 

বিষয়টি একটু ব্যাখ্যার দাবী রাখে, একটু গোড়া থেকেই কথাটি বলতে হয় সেটি হলো আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) এর সৃষ্টির কাহিনী। আল্লাহ ঘোষণা করলেন, তিনি পৃথিবীতে মানুষ পাঠাতে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারে ফেরেশতাদের সাথে কথা বার্তা হলো সেদিকে যাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ হযরত আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করলেন। কিন্তু তাকে পৃথিবীতে না পাঠিয়ে বেহেশতে পাঠালেন, বললেন এখানে শান্তিতে বাস করো, যথেচ্ছা ঘোরাফেরা করো, যা ইচ্ছা খাও, আনন্দ করো, কিন্তু একটি বিশেষ বৃক্ষের ফল খাবে না। কিন্তু শয়তান কুপ্ররোচনা দিলো তিনি এবং তার স্ত্রী সে বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করলেন। ফলে আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠালেন, পাঠাবার পূর্বক্ষণে বললেন, তোমাদের কাছে হিদায়াত যাবে, রোডম্যাপ যাবে, পথের বর্ণনা যাবে, তোমরা যদি সেই পথ ধরো, আর সেই পথে চলো তাহলে বিনাকষ্টে এবং বিনাদ্বিধায় নির্বিঘেœ এই জান্নাতে ফিরে আসতে পারবে। সেই রোডম্যাপ হলো আল্লাহর কিতাব। এই উম্মতের জন্য আল্লাহর কিতাব হলো কুরআন। এ কুরআন মানুষকে পাপ পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ, কুলষিত পৃথিবীতে বেহেশতে ফিরে যাওয়ার পথ দেখায়। কুরআনই হলো মানুষের জন্য হিদায়াত। কিন্তু কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারবে তারা, যাদের মধ্যে তাকওয়া আছে। যাদের মধ্যে ইতিবাচক মানুষিক আছে। যা মানুষকে সত্যপথে চলতে উদ্ভুদ্ধ করে এবং বাতিলের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা এই ইতিবাচক মানুষিকতা নিয়ে কুরআন পাঠ করে, তারা জান্নাতে যাওয়ার পথ পেয়ে যায় এবং সে পথে চলতে পারে। যারা ইতিবাচক মানুষিকতা ছাড়া কুরআন চর্চা করে এবং অধ্যয়ন করে তারা কুরআনই আদর্শের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু তা থেকে উপকৃত হতে পারে না। আমরা দেখতে পাই আজকের বিশ্বে, পশ্চিমা জগতে কুরআন ও রাসূলের আদর্শ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, গবেষকরা বলছে যে পৃথিবীতে যদি শান্তি আসতে হয় তাহলে এই রাসূলের আদর্শেই সেই শান্তি আসতে পারে। সেহেতু তাদের মধ্যে ইতিবাচক মানুষিক নেই তারা সেই পথে চলতে পারে না। সেই পথে চলে জান্নাতে পৌঁছতে পারে না। 

সেই ইতিবাচক মানুষিকতাকে কুরআনে একটি বিশেষ পরিভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো তাকওয়া। অর্থাৎ যাদের মধ্যে তাকওয়া আছে তারা কুরআন থেকে উপকৃত হবে। এবং কুরআনের রোডম্যাপ ঠিকভাবে বুঝতে পারবে। সে পথে চলতে পারবে। এবং নির্বিঘেœ জান্নাতে পৌঁছতে পারবে। এই তাকওয়া হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা থাকলে কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে নির্বিঘেœ জান্নাতে পৌঁছা যায়। সারকথা, কুরআন নাযিল হয়েছে রামাদান মাসে। যা মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার রোডম্যাপ দেয়। আর এ রোডম্যাপ দ্বারা উপকৃত হতে হলে তাকওয়া প্রয়োজন। সুতরাং যৌক্তিকভাবেই কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালন করতে বলা হয়েছে এমনভাবে যাতে মানুষের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। ইতিবাচক মানুষিকতা সৃষ্টি হয়। কুরআনে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ তোমাদের উপর সাওম বা রোজা ধার্য্য করে দেয়া হলো, ফরজ করে দেয়া হলো যেভাবে পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর তা বাধ্যতামূলক ছিলো, যেনো তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। 

কাজেই কুরআন নাযিল হওয়ার বার্ষিকীকে এমনভাবে পালন করতে বলা হয়েছে যাতে তাকওয়া অর্জিত হয়। তাকওয়ার সারকথা হলো, সাবকন্ট্রোল আত্মসংযম, মানুষের প্রবৃত্তি ও নফসকে সংবরণ করার ট্রেনিং। তাকওয়া হলো এমন মানুষিকতা যা মানুষকে সবধরণের অন্যায়, অশ্লীল, ও অসামাজিক কাজ থেকে বিরত রাখে। কারণ এমন কাজ করলে আল্লাহর শাস্তি পেতে হবে। তাকওয়া এমন সব কাজ করতে বাধ্য করে, যা না করলে আল্লাহর শাস্তি পাওয়া যাবে। এই আল্লাহ ভীতি মানুষকে সুপথে চলতে সাহায্য করে। সারকথা, আমরা যদি কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালনের প্রতিটি কর্ম ও প্রতিটি আমলের পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো তার গোড়াতে রয়েছে আল্লাহ ভীতি, তাতে রয়েছে সব ধরণের সমাজিক অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষন, তাতে রয়েছে সব ধরণের ভালো কাজ করার ট্রেনিং। 

একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালন করি। অর্থাৎ সাওম বা রোজা সহ সব ধরণের কাজ এবং আমল করা হয় যাতে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। কারণ এই তাকওয়া দ্বারাই কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়া যায়। যা এই মাসে নাযিল হয়েছে। আর যা বরণ ও ধারণ ও অনুসরণ করতে পারলে দুনিয়াতে থেকে নির্বিঘেœ জান্নাতে যাওয়া যায়। 
কাজেই কুরআন নাযিল হওয়ার বার্ষিকী হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বার্ষিকী সাফল্যের সাথে পালন করতে পারা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। ঘটা করে উদ্যাপন করার ব্যাপার। আর তা উদ্যাপনই ঈদুল ফিতর। 

ঈদুল ফিতর হলো কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালনের আনন্দ উদযাপন। এই আনন্দের মাত্রা কুরআন নাযিলের বার্ষিকী পালনের সাফল্যের মাত্রার উপর নির্ভর করে। আর এই আনন্দ কতটুকু দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নির্ভর করে আমরা এই কুরআনের শিক্ষাকে আমরা কতদিন ধারণ করতে পারি। রামাদানের পরেই যদি আমরা কুরআনকে ভুলে যাই তাহলে তেমন আনন্দের কিছু নেই। তার উদাহরণ হলো এমন যে আমরা কয়েকদিন ধরে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার খেলাম আর সেই নির্দিষ্ট কয়েকদিন পর ডায়রিয়া হলো এবং সব কিছু শরীর থেকে বেরিয়ে গেলো আমরা তেমনি রয়ে গেলাম, যেমন আগে ছিলাম। কাজেই আমরা যদি ঈদুল ফিতরের আনন্দকে ধরে রাখতে চায়, সারা বছর ধরে সারা জীবনে তাহলে আমাদের কুরআনকে ধারণ করতে হবে, কুরআন চর্চা করতে হবে, অধ্যায়ন করতে হবে, আমল করতে হবে এবং আমাদের জীবনের আদর্শ বলে মেনে নিতে হবে।     

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ   

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল