জেলা প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের মধুখালীতে সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে সিজারের পর প্রসূতির পেটে গজ কাপড়, টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পেটে রক্ত জমাট বেঁধে ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই প্রসূতি মারা গেছেন বলে দাবি স্বজনদের।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল পেটে ব্যথা নিয়ে উপজেলা সদরের সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে চিকিৎসা নিতে যান উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রত্না বেগম। এক পর্যায়ে তাকে সিজার করার পরামর্শ দেন ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী সুমি আক্তার।
পরে ওই রাতেই মাগুরা থেকে এক চিকিৎসক এসে তার অপারেশন করেন। ঘটনার ১০ দিন পরে গত ২৩ এপ্রিল ওই প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হলে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ২৪ এপ্রিল মারা যান তিনি।
প্রসূতি রত্না বেগমের স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ এপ্রিল মধুখালীর সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে আমার স্ত্রীর সিজার করানো হয়। তখন আমার পুত্র সন্তান হয়।
তবে বাচ্চা অসুস্থ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকদিন পরে আমার স্ত্রীর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার দেখে বলেন, সিজারের পরে যে সেলাই করা হয়েছে তার মাঝে ফাঁকা রয়েছে, সুতো মিলে নাই, ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে পচে গেছে।
এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, যতক্ষণ ব্লাড দেয়া হবে, ততক্ষনই রোগী বাঁচবে। আমি তখন ডাক্তারের কাছে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, এই রোগীর যিনি সিজারের পর সেলাই ভালো হয়নি, ফুটো রয়েছে।
এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অপারেশন করা হলে দেখা যায়, ভেতরে তুলো, গজ কাপড় ও একটা ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া বাচ্চার নাড়িও সঠিকভাবে কাটা হয়নি, ভেতরে রয়ে গেছে।
রোগীর স্বজন মো. হাসান বলেন, ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা জানান, পেটের মধ্যে গজ, তুলা, ক্লিপ পাওয়া গেছে। এগুলো পেটের মধ্যে রেখেই সেলাই করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী সুমি আক্তার বলেন, আমাদের ক্লিনিকে ওই রোগীর সিজার করেছেন ডা. মাসুদুল হক। সিজারের পরেও রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। এরপর সুস্থ অবস্থায় চারদিন পর বাড়ি ফিরে যান। এরপর রোগী ও তার স্বজনরা আমাদের কাছে আসেননি এবং কিছুই জানাননি। এমনকি রোগীর মৃত্যুর পরও আমাদের কিছু জানাননি। তবে লোক মারফত জানতে পেরেছি তিনি মারা গেছেন।
তবে রত্না বেগমকে সিজার করার বিষয় অস্বীকার করেন ডা. মাসুদুল হক। তিনি বলেন, গত দেড় বছর মধুখালী যাওয়া হয় না। আমি কীভাবে সিজার করবো?
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আ. সালাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময় জার্নাল/এলআর