রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ফরিদপুরে সিজারের পর টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাই, রক্ত জমাট বেঁধে রোগীর মৃত্যু

শুক্রবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
ফরিদপুরে সিজারের পর টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাই, রক্ত জমাট বেঁধে রোগীর মৃত্যু

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার  সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে সিজারের পর প্রসূতির পেটে গজ কাপড়, টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এরপর পেটে রক্ত জমাট বেধে পচে দুর্গন্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনার ১১দিন পরে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা যায় , গত ১৩ এপ্রিল পেটে ব্যাথা নিয়ে উপজেলা সদরের সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে ডাক্তার দেখাতে যান উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রত্না বেগম। এক পর্যায়ে তাকে সিজার করার পরামর্শ দেন ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী সুমি আক্তার। পরে ওই রাতেই তার অপারেশন করেন মাগুরা থেকে আসা ডাক্তার মাসুদুল হক। ঘটনার ১০দিন পরে গত ২৩ এপ্রিল ওই প্রসূতির ব্লাডিং শুরু হলে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। ওই দিনই ওই প্রসূতিকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ২৪ এপ্রিল তিনি মারা যান।

এ বিষয়ে  প্রসূতি রত্না বেগমের স্বামী মোঃ মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ এপ্রিল মধুখালীর সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে আমার স্ত্রীর সিজার করানো হয়। তখন আমার পুত্র সন্তান হয়। এরপরই বাচ্চা অসুস্থ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তারা আমার স্ত্রীকে সেলাই করে বেডে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে কয়েকদিন পরে আমার স্ত্রীর প্রচুর ব্লাডিং শুরু হয়। তখন তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার দেখে বলেন, সিজারের পরে যে সেলাই করা হয়েছে তার মাঝে ফাঁকা রয়েছে, সুতো মিলে নাই, ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে পচে গেছে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, যতক্ষণ ব্লাড দেয়া হবে, ততক্ষনই রোগী বাঁচবে। আমি তখন ডাক্তারের কাছে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, এই রোগীর যে সিজার করেছে সে ডাক্তার নাকি কশাই? সেলাই ভালো হয়নি, ফুটো রয়েছে। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অপারেশন করা হলে দেখা যায়, ভেতরে তুলো, গজ কাপড় ও একটা ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া বাচ্চার নাড়িও সঠিকভাবে কাটা হয়নি, ভেতরে রয়ে গেছে। যেকারনে, পেটের ভেতর পচে দুর্গন্ধ হয়ে ইনফেকশন হয়ে রোগী মারা গেছে।

রোগীর স্বজন মোঃ হাসান সহ একাধিকরা জানান,ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা জানান, পেটের মধ্যে গজ,তুলা,ক্লিপ পাওয়া গেছে। এগুলো পেটের মধ্যে রেখেই সেলাই করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে  প্রসূতি রত্না বেগমের মা বলেন, আমার মেয়ের পেটে ব্যাথা উঠলে ডাক্তার দেখাতে যাই। তখন সুমি ক্লিনিকের সুমি আক্তার সিজার করাতে বলেন। আমরা চলে আসতে গেলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাদের এখানে ভালো ডাক্তার রয়েছে, আপনার মেয়ের সমস্যা হবে না। এখন কি করলো ওরা, আমি ওদের বিচার চাই।

রত্না বেগমের চাচাতো ভাই সাজ্জাত মোল্লা জানান, সিজারের পর পেটের মধ্যে গজ কাপড়, টিস্যু, তুলা,ক্লিপ রেখেই সিলাই করা হয়েছে। পেটের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।  ক্লিনিক, ডাক্তারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার জন্য রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। 

ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী সুমি আক্তার বলেন, আমাদের ক্লিনিকে ওই রোগীর সিজার করেছেন ডাঃ মাসুদুল হক।  সিজারের পরেও রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ অবস্থায় চারদিন পর বাড়িতে ফিরে যান। এরপর রোগী ও তার স্বজনরা আমাদের কাছে আসেননি এবং কিছুই জানাননি। এমনকি রোগীর মৃত্যুর পরও আমাদের কিছু জানাননি। তবে লোক মারফত জানতে পেরেছি তিনি মারা গেছেন। 

এ বিষয়ে রত্না বেগমের সিজারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডাঃ মাসুদুল হক। তিনি বলেন, গত দেড় বছর যাবৎ মধুখালীতে যাওয়া হয় না, আমি কিভাবে সিজার করবো ?  

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আঃ সালাম জানান, এ  বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল