জেলা প্রতিনিধি:
জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ। পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা। জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় বাড়ছে এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ।
বছরে তিনবার বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষ করে চারগুণ লাভের মুখ দেখেছেন তারা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও রসালো হওয়ায় চাহিদাও বেশি। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ।
এ পদ্ধতিতে শীতকালের তিন মাস বাদে ৯ মাস তরমুজ উৎপাদন সম্ভব। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা। এতে বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে।
দিন দিন চাষির সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার ৬৫ গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক চায়না, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ান দেশের ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা, তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা যায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে এবার বারোমাসি তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদরে ৯ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ২২ হেক্টর, আক্কেলপুর উপজেলায় ২ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ৭ হেক্টর।
চাষিরা জানান, গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের ওজন হয় এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে। আর ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি হয়। তাই মাচায় ঝুলে থাকা ফলগুলো নেটের ব্যাগেই বেঁধে রাখতে হয়।
চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যেই ফলন আসে এবং ফল পরিপক্ব হয়ে যায়। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাস্তার পাশ থেকে জয়পুরহাট পৌরশহর থেকে তরমুজ কিনতে আসা জয় মন্ডলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, অসময় তরমুজ খেতে ভালো লাগে। তাই দুবছর ধরে তরমুজ কিনতে এ খানেই আসি। পরিবারের সবাই মধুমালা তরমুজ টা খেতে পছন্দ করে। তাই ২০ কেজি কিনে নিলাম।
ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বারোমাসি তরমুজের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। গত তিন বছর ধরে আমি এখান থেকে ঢাকায় তরমুজ নিয়ে যাই। এখান থেকে পাইকারি ১৫০০-১৭০০ টাকা মণ হিসাবে কিনে ঢাকায় সাড়ে ৩ হাজার-৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি। এখানকার তরমুজ অনেক রসালো ও মিষ্টি হওয়াও চাহিদাও ব্যাপক।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মুজিবুর রহমান বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক ফসল। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কম লাগে।
এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ পরিবেশবান্ধব। গত বছর জেলায় ৩০০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘার ওপর চাষ হয়েছে। এ চাষ সম্প্রসারণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকিও করা হচ্ছে।
সময় জার্নাল/এলআর