এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্বন্বিত ফরিদপুর কার্যালয় দুদক। অভিযানকালে আউটসোর্সিংয়ে কর্মচারী নিয়োগে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানা গেছে ।
মঙ্গলবার এ অভিযান চালান দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন।
দুদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অভিযানকালে হাসপাতালের প্রত্যেকটি বিভাগে কর্মরত পরিছন্নকর্মী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী ও সেবা প্রার্থীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে তারা। তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ডমাস্টার বিরাজ হোসেন পরিছন্নকর্মী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ গ্রহণ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুদকের দলটি হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ডমাস্টার রিয়াজ হোসেনের কক্ষটি খুলে দিতে বললে ওয়ার্ড মাস্টার গড়িমসি করেন। পরে দুদকের আভিযানিক দলটি তালা ভেঙ্গে ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। কক্ষটি তল্লাশি করে বেশ কিছু ফাইল জব্দ করা হয়। এ ফাইলগুলোর মধ্যে একটি ফাইলে বেশ কিছু আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ফাইলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওয়ার্ড মাস্টার আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, টাকাগুলো তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মকর্তাদের দিয়েছেন। তবে তারা (কোম্পানী) টাকা নিলেও তার দেওয়া আবেদনকারীদের নিয়োগ দেয়নি। তিনি এখন ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করছেন।
ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষ থেকে পাওয়া একটি ফাইলে বেশ কিছু বিনা বেতনে কাজ করার অঙ্গিকারনামা ও পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ জানান, প্রায় ৯০ জন কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করছেন। মূলত এই বিনা বেতনে কর্মরত কর্মচারীরা হাসপাতালটির ট্রলি টানা বাবদ ২০০ টাকা, মর্গের লাশ গ্রহণকারী স্বজনদের কাছ থেকে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এরাই রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায়।
দুদকের দলটি হাসপাতালটি পরিদর্শনকালে আউটসোসিং এ নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্তব্যে গাফিলতা দেখেন। হাসপাতালটির পরিবেশ অপরিস্কার ও অপরিছন্ন অবস্থায় দেখা যায়।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, সাম্প্রতিক আউটসোর্সিং এ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম শিফট এ কর্মরত অধিকাংশরাই স্বীকার করেন যে, তাদের নিয়োগ পেতে ওই সিকিউরিটি কোম্পানীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অভিযানকালে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ হোসেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে আউটসোর্সিং এ কর্মচারী নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ লোকদের নিকট হতে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে ধারনা করা যাচ্ছে।
সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা উল্লেখিত অভিযোগ সমূহের সত্যতা পেয়েছি। হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সেবা দেয়ার মান অসন্তোসজনক। এখানে বিনা বেতনে ৯০ জন স্টাফ আছে, যারা রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। আউটসোর্সিং এর নিয়োগে অর্থ লেনদেনের সত্যতা মিলেছে।’
তিনি আরো জানান, অভিযানের পুরো প্রতিবেদন আমরা কমিশনের জমা দিবো৷ কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানূগ কার্যক্রম চালানো হবে।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক জানান, তিনি মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকায় ছিলেন। দুদক তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে এ বিষয়টি তার জানা নেই।
ফরিদপুরে একাধিক সুধী সমাজের ব্যক্তিরা জানান , ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক এই দুর্নীতির দায় - দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তার সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই আছে । তাকে ও আইনের আওতায় আনা উচিত ।
এমআই