এম. আবদুল আলীম
বইমেলা এলে ঘুরেফিরে আসে লেখক-প্রকাশক-প্রচ্ছদশিল্পী আর পাঠকদের কথা। আসাটাই স্বাভাবিক। একজন লেখক দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ঘাম ঝরিয়ে মেধা-মনন ও চিত্তের মেলবন্ধনে জগত-জীবন ও পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলকে লেখনীর মাধ্যমে শাশ্বত রূপ দান করেন। প্রকাশক সেটি প্রকাশ করেন, করেন বাজারজাত। প্রচ্ছদশিল্পী নিপুণ কারুকাজে বইয়ের ভেতরের ভাবটি প্রচ্ছদে ফুটিয়ে তোলেন। এর বাইরেও আছেন একটি শ্রেণি, যাঁরা বই মুদ্রণ ও সেলাই-বাঁধাই করে দৃষ্টিনন্দন অবয়ব দান করেন। বলছি বইয়ের মুদ্রণ ও বাঁধাই শিল্পীদের কথা। বইমেলা এলে অবিরাম চলে এঁদের কর্মযজ্ঞ।
একবার বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢুকেছিলাম কাঁটাবনের একটি বাঁধাই-ঘরে। কেউ ভাঁজ করছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আঠা লাগাচ্ছেন, কেউ আবার আঠার উপর নিপুণভাবে বসিয়ে দিচ্ছন বইয়ের প্রয়োজনীয় উপকরণটি। কেউ আবার ব্যস্ত কাটিং কিংবা প্যাকেটিং-এর কাজে। কথা হলো এঁদের কয়েকজনের সঙ্গে। সকলেরই বয়স ১৫-১৬র মধ্যে। এসেছে দূর-দূরান্ত থেকে। থাকা-খাওয়া ফ্রি, বেতন মাসিক এক হাজার থেকে ২৫০০-এর মধ্যে। কোনো অতৃপ্তি নেই। বেশ আনন্দে আছে ওরা।
একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো ৩০ বছর আগে বইয়ের বাঁধাই শিল্পীর কাজ করতে ঢাকায় এলেও এখন নিজেই বাঁধাইখানা ও প্রেসের মালিক। ছেলেমেয়ে পড়ে ভার্সিটি ও নামী স্কুলে। এখনও নিজ হাতে বাঁধাইয়ের কাজ করেন অন্য বাঁধাই শিল্পীদের সঙ্গে। একসঙ্গে বসে খাবারও খান। এই মুদ্রণ ও বাঁধাই শিল্পীদের হাতের স্পর্শেই থরে থরে সাজানো নানা রঙ আর বর্ণের ছাপানো কাগজ বইয়ে পরিণত হয়।
আমরা তাজমহলের কথা জানি, জানি এর রূপকার সম্রাট শাহজাহানের কথা। কিন্তু যাঁদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে গড়া এই তাজমহল তাঁদের কথা কতটুকু মনে রেখেছি? একইভাবে বইয়ের লেখক, প্রকাশক, প্রচ্ছদ শিল্পী এবং পাঠকদের কথা আমরা সকলেই জানি, পত্র-পত্রিকায় তাদের নাম দেখি, দেখি চটকদার বিজ্ঞাপন। কিন্তু এই মুদ্রণ ও বাঁধাই শিল্পীদের কথা কী জানি বা মনে রাখি?
এম. আবদুল আলীম
গবেষক ও প্রাবন্ধিক
শিক্ষক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সময় জার্নাল/