গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরো শক্তিশালী হয়ে কক্সবাজারের দিকে এগিয়ে আসছে। একারণে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টন থেকে তিন হাজারেরও বেশি লোকজন নিজস্ব উদ্যোগে ট্রলারে করে টেকনাফে চলে এসেছে। আর যারা স্থানীয় দ্বীপবাসি রয়েছে তাদের স্থানীয় হোটেল রিসোর্ট এবং নৌবাহিনী কোস্ট গার্ডের স্থাপনায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সভায় ঘুর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি এবং জানমান রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে আজ এবং আগামীকাল দুদিন বিমান উঠা নামা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নামতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পেকুয়া মহেশখালী টেকনাফ এবং সদর এলাকার ঝুকিপূর্ণ বাসিন্দারা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে উপকূল এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। নৌবাহিনী কোস্ট গার্ড রেড ক্রিসেন্ট সহ উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে মাইকিং করছে। কক্সবাজার জেলায় ৫৭৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজার মুখী, সেহেতু কক্সবাজারসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটু ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্যই সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। একই সাথে সেন্টমার্টনে ভিন জেলার লোকজনকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার বিপদ সংকেত বাড়ার সাথে সাথে জেলার উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৯টি মেডিকেল টিম। দেড় শত মেট্টিক টন চাল, ৬.৯ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন, ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ১৯ হাজার নগদ টাকা মজুদ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের উপকুল এলাকা বিশেষ করে কুতুবদিয়া ধলঘাটা মাতারবাড়ী দ্বীপে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের গোসল করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ ব্যপারে সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ডের কর্মীদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম জানিয়েছেন সৈকতে আগত পর্যটকদের পানিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সৈকতে পর্যটকদের সকল সেবা আপাতত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩ টি শরনার্থী ক্যাম্প রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। আজ সকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি সভা করেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবদুর রহমান জানিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে।
এমআই