মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি :
গুনগত মান ও সহজলভ্যতার কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের বালুর চাহিদা ব্যাপক। আর এই সুযোগে জামালপুর সদরের ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ের অর্ধশত পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদের দুই পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক বসত বাড়ি, ফসলী জমি, জামালপুর- ময়মনসিংহ মহাসড়ক , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান. মসজিদ- মাদ্রাসাসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন, অবৈধ বাল্ক হেড দিয়ে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলিত হয়। আর এসব বালু বিক্রিও হয় প্রকাশ্যে। এছাড়া বালু বহনকারী গাড়িগুলো চলাচল করে জামালপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো দিয়ে। চলাচলের সময় বালু বহনকারী এসব গাড়ি থেকে বালু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও এসব বালু বহনকারী গাড়ির জন্য ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।
সদর উপজেলার শরিফপুরের ভুক্তভোগী এলাকাবাসী শুকুর আলী বলেন- “এই জায়গাতে অবৈধ বালু তোলাতে এখানে সাইড দিয়ে বাড়ি-ঘর যেগুলো আছে, সেগুলোর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হইতাছে। এমনকি রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা চাই যে অবৈধ বালু তোলা বন্ধ হোক।”
একই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী মিস্টার মিয়া বলেন- “বড় বড় লঞ্চ দিয়ে, ট্রলার দিয়ে বালূ তুলতাছে। আঙ্গর ক্ষতি হইতাছে। আঙ্গর ঘর-বাড়ি নামাই দিতাছে। আমরা কি কইরে থাকমু এহনকা।”
মো জহুরুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন- “অবৈধ বালু তোলার কারনে আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের গাছপালার বিলীন হয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালু তোলার কারনে। আমাদের ঘাট ভাইঙ্গে যাইতাছে গা। গাছপালা সব বিলীন হয়ে যাইতাছে গা ।”
স্থানীয়দের অভিযোগ- দীর্ঘদিন যাবত সদর উপজেলার ফেরীঘাট, হরিপুর, শরিফপুর, বানার, নান্দিনাসহ বেশ কয়েকটি জায়গার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করছে অসাধু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালনের পর কয়েক দিনের জন্য বন্ধ হয় বালু উত্তোলন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে ব্যবসায়ীরা।
নান্দিনা এলাকার বাসিন্দা প্রান্তিক ইসলাম বলেন- এটা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা অনেক অভিযোগ দিছি। ডিসি অফিসে গেছি। অনেক লোকজনে মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানাইছি। এরা কারো কথা শুনে না। ২-১ মিনিটের জন্যে বন্ধ রাখে। আবারো চালু করে। আমাদের করার কিছু নাই। আমরা নিরুপায়।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা আকাশ মিয়া বলেন-“আমরা মানববন্ধন করছি। মানববন্ধন করার পরে কয়েকদিন বন্ধ থাকে। আবারো চালু হয়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন-“অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের সিন্ডিকেটের প্রধান একজন। সে সব কন্ট্রোল করে। তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এছাড়াও এই বালু উত্তোলনে জড়িত রয়েছে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। এটি এখন ওপেন সিক্রেট। এরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।”
বসত-বাড়ি বাচাতে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি স্থানীয়দের।
এসব বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন- “আমরা ইতি মধ্যে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। পাশাপাশি যারা এই সকল এলাকায় আমাদের সরকারি বালি নিয়েছে তাদের সাথে আমরা যৌথভাবে চেষ্টা করছি। অবৈধভাবে যারা উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে যাতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। এই সমস্ত এলাকায় যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। আমরা আশাবাদী যে- এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের এই এলাকায় যে অবৈধ বালু উত্তোলন। এটা নিয়ন্ত্রন করতে পারবো।”
এমআই