জেলা প্রতিনিধি:
কোরবানির ঈদের মাস দেড়েক আগেই দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অস্থির গরম মসলার বাজার। গত বছরের তুলনায় কোনো কোনো মসলার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। দাম বাড়ার শীর্ষে জিরা।
দেশে ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অনীহার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জের মসলা বাজারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এলসি জটিলতায় আমদানি সীমিত হওয়ার সুযোগে যারা আগেভাগে এলসি পেয়েছেন কিংবা যাদের পণ্য মজুত রয়েছে, তাদের একটি অংশ সিন্ডিকেটে জড়িয়ে মসলার বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন।
রোববার (২১ মে) সরেজমিনে খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসলা ব্যবসার নানান সমীকরণ। ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি কম হলেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়তগুলোতে কোরবানির অত্যাবশ্যকীয় এ উপকরণগুলোর জোগান রয়েছে। বেশিরভাগ উপকরণে রয়েছে ভারতীয় আধিক্য।
গত বছরের তুলনায় চিকন জিরা, মিষ্টি জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিদেশি মসলা হিসেবে লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনির দামেও রয়েছে অস্থিরতা। পাশাপাশি দেশি মসলা হিসেবে মরিচ, ধনিয়া, হলুদের দামও চড়া।
বাজারে সংকটের কারণে ভারতীয় সরবরাহকারীরাও সুযোগ নিয়েছে। এতে ভারতীয় জিরার বুকিং রেট বেড়েছে। আগে যেখানে টনপ্রতি ১৮শ ডলার বুকিং রেট ছিল, সেই জিরা এবার বুকিং রেট ছয় হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। তার ওপর রয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব।
একইভাবে মিষ্টি জিরাও গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ভারত, মিশর থেকে মিষ্টি জিরা আমদানি হয়। আগে মিশরীয় জিরা বেশি চললেও এবার ভারতীয় জিরা বেশি কেনাবেচা হচ্ছে বাজারে। প্রতি কেজি জিরা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে এ মিষ্টি জিরা বিক্রি হয়েছিল ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে।
বাজারে এবার চায়না, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার ও আফ্রিকান দেশ জাম্বিয়া থেকে আসা লবঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি লবঙ্গ ১ হাজার ৪২০ থেকে ১ হাজার ৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগেও চায়না লবঙ্গ প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
বাজারে বেশিরভাগ এলাচি আমদানি হয় গুয়েতেমালা থেকে। পাশাপাশি ভারত থেকেও সীমানা পেরিয়ে এলাচ আসে খাতুনগঞ্জে। বাজারে বেশ কয়েক ধরনের এলাচ রয়েছে। এর মধ্যে আর এস জাম্বো, জেবিসি, এলএমজি, এসএমজি অন্যতম। বাজারে বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি এলাচে ১০০-২০০ টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম থেকেই দারুচিনি আসতো চায়না থেকে। ভালো মানের হওয়ায় কয়েক বছর ধরে যুক্ত হয় ভিয়েতনাম। বর্তমানে বাজারে ভিয়েতনামের দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকায়। এক বছর আগেও একই দারুচিনি বিক্রি হতো ২৬০-২৭০ টাকায়। বাজারে চায়না দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
মসলার নিয়মিত উপকরণ মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে মিষ্টি ও ঝাল দুই ধরনের মরিচ পাওয়া যায়। এবার হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচ প্রতি কেজি ৪৬০ টাকা, রায়পুরী মরিচ ৩৬০ টাকা, পঞ্চগড় ৩৩০ এবং ভারতীয় মিষ্টি মরিচ ৪৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ঝাল মরিচের মধ্যে ভারতীয় তেজা ৩৭০ টাকা, কুমিল্লার বাতাগান্ধি মরিচ ৩৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সময় জার্নাল/এলআর