সর্বশেষ সংবাদ
প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর:
ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দর। বিভিন্ন হাটে-বাজারে চার / পাচ দিন আগেও যে পেঁয়াজ মণ প্রতি ৩০০০ থেকে ৩৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা এখন মণ প্রতি ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদরের বিভিন্ন হাটে-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে দেশি পেঁয়াজের।দেশের বাজারে ভারতীয় পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ফরিদপুরের পেঁয়াজের হাট-বাজার গুলোতে কয়েক দফায় বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ আবার দাম কমেছে পেঁয়াজের। তবে আমদানির আগেই হঠাৎ এমন দরপতনে হতাশ হয়েছেন চাষিরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে স্বস্তি ফিরে পায় কৃষকেরা। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি ভোক্তারা।
এদিকে প্রতিমন পেঁয়াজ গড়ে ২০০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্য বজায় থাকলে সবার জন্যই ভালো। এমন দাবি চাষি,ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে প হাটে পাইকারি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। এ হাটে প্রতি মন পেঁয়াজ ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা গেলো তিন দিনের তুলনায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।
কৃষক মারুফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পর ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা।পেঁয়াজ আমদানি বন্ধসহ বাজারদর ঠিক থাকলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়বে। এবার প্রায় ১৪০ মন পেঁয়াজ পেয়েছিলা। দাম বাড়ায় ৪০ মনের মতো বিক্রি করেছি। বাকিগুলো রেখে দিয়েছি। এ রকম দাম থাকলে চাষিদের জন্য ভালো। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি শেখ শিথিল জানান,গত দুই তিন দিনে ভাল দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলে প্রায় দুইশো মন বিক্রি করে দিয়েছি। আজকের হাটে ৩০ মন বিক্রির জন্য এনেছি। কিন্ত মন প্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনও যে দাম আছে তা মুটামুটি। আরো দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সাতৈর বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ বিক্রি করতে। তিনি বলেন, দাম বেশি দেখে পাঁচ মণ পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। গত হাটে যে পেঁয়াজ ৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই পেঁয়াজ আজ ২৩০০ টাকা দাম বলছে। কী করব ভাবছি। যেহেতু গাড়ি ভাড়া করে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি; তাই বিক্রি তো করতেই হবে।
মধুখালী উপজেলা সদর বাজারের বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তের মালিক মোঃ আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন হাটে-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হঠাৎ করে কয়েকগুন দাম বৃদ্ধির পর আবার হঠাৎ দরপতন হয়েছে। মোকামে চাহিদা কম। আমদানির খবর শুনেই মুলত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতি মনে হাজার টাকা কমেছে। শনিবার ভালো মানের পেঁয়াজ ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ দরে ক্রয় করেছি। তবে আমার ধারণা আমদানির কথা শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যার কারনে বাজারের এই অবস্থা। তিনি আরও বলেন,২১০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৩০০ টাকা মন প্রতি পেঁয়াজের দাম সীমাবদ্ধ থাকলে ,ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য সুবিধা। তাছাড়া দেশের কৃষকদের ঘরে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার ভালো।
এই মুহুর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি পাইকারদের। আবার দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম ভিত্তিতে হতাশ ভোক্তারা। পাইকার ব্যাবসায়ীদের মতে, বাজারে ভারতীয় পেয়াজ ঢুকলে দাম একটু কমবে। হঠাৎ দরপতনে এখন যেমন বর্তমান বাজারে দেশি পেয়াজের সরবরাহ কম।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো.সোহেল শেখ জানান, আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ী,অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে এ সমস্যা তৈরী না করতে পারে সে বিষয়েও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ জিয়াউল হক জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও বাম্পার হয়েছে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের তো কোন হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, দুয়েকদিনের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল