নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে- এমন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, 'ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামীতে ইস্পাত কঠিন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।'
শনিবার (২৭মে) বিকেলে রাজধানীতে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তি দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নয়াপল্টনে জনসমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘সরকার আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের শুরু করেছে। এবার কিন্তু সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো খবর থাকবে না। সে জন্য নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করছে।’
সরকার আবার ক্ষমতায় আসতে গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে- এমন অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘গায়ের জোরে অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আবারও টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতা রফিকুল আলম মজনু, সাইফুল আলম নিরব, মোনায়েম মুন্নাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারা ফের ক্ষমতায় থাকতে গায়েবি মামলা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য একটাই-আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। ইতোমধ্যে দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামীতে ইস্পাত কঠিন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সবর উপস্থিতির কথা তুলে ধরে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অতীতে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশে সরকারি দল ও তাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর নির্যাতন উপেক্ষা করে মানুষ সমাবেশ সফল করেছে। তবুও তারা সমাবেশে যোগদান করেছে। আজকে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালে আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ। কারণ তারা জানে খালেদা জিয়ার দল বিএনপিকে ঠেকানো যাবে না।’
মোশাররফ বলেন, ‘এবারও সরকার ইভিএম দিয়ে ভোট করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের দাবির মুখে ইভিএম প্রকল্প বাতিল হয়েছে। এবার কিন্তু সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো খবর থাকবে না। সে জন্য নানা ধরনের ফন্দি ফিকির করছে সরকার।’
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হতে হবে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অতীতে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও হবে না। সেজন্য বিএনপি তার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আজকে আন্তর্জাতিকভাবেও দাবি উঠেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। বিএনপিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত কোনো দল হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কথা তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে আমেরিকা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে আবারও ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কারণ এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিয়েছে। এই ঘোষণা বাংলাদেশের মানুষের জন্য লজ্জাজনক। আমরা অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তা ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না।’
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অনৈতিক হুকুম মানবেন না। অতীতে যারা এমনটা করেছে তাদের আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো অন্যায় কাজ করবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আপনারা অতি উৎসাহী হবেন না। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন।’
পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
এমআই