নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, '২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান বলেই আজকে বাংলাদেশ আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।'
আজ রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকে বিশ্বব্যাপী যে অবস্থা আমরা দেখছি, সেখানে আমরা চাই যে, শান্তির মাধ্যমে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। আমরা তো পেরেছি! আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি আমরা করেছি আলোচনার মাধ্যমে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সিটমহল বিনিময় করেছি আলোচনার মাধ্যমে। তাহলে কেন আজকে এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা! অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেই অর্থ কেন ব্যয় হয় না ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য?'
'এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণে হাজার হাজার শিশু-নারী মানবেতর জীবন যাপন করছে সারা বিশ্বব্যাপী। আমরা আশ্রয় দিয়েছি রোহিঙ্গাদের। তারাও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। মনে পড়েছিল একাত্তর সালের কথা, তাই তাদেরকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কাজেই আমরা চাই, বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক। কোনো রকম অশান্তি যেন না আসে,' বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ; আমরা সব সময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে চাই। যেখানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ ছিল, আজকে আমরা তা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে আমাদের হতদরিদ্র ছিল ২৫ দশমিক ৯ ভাগ, তা আমরা এখন ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ এ দেশের কোনো মানুষ হতদরিদ্র-গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ অন্তত তাদের মৌলিক অধিকার পাবে; অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা পাবে। জাতির পিতার যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য আমরা বাস্তবায়ন করে যাব।'
'আজকের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এই উন্নয়নের পেছনের রয়েছে অব্যাহত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এ কথা সকলকেই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর একের পর এক এ দেশে ক্যু হয়, সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। সামরিক অফিসার, মুক্তিযোদ্ধ—কত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, তাদের হত্যা করে গুম করা হয়। একটা অশান্ত পরিবেশ। প্রতি রাতে কারফিউ। এই ধরনের একটা পরিবেশের মধ্য দিয়ে ২১টা বছর এ দেশের মানুষকে কাটাতে হয়েছিল,' বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা ৯৬ সালে এসেছিলাম সরকারে, তখন কিছু উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অন্তত আমরা এটুকু বলতে পারি, ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছিলাম। এরপর মাঝখানে আবার একটা অশান্ত পরিবেশ। হাজার হাজার আমাদের নেতাকর্মী চোখ-হাত, তাদের জীবন, সম্পদ হারিয়েছে। কত অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এরপর আবার ২০০৮ সালের নির্বাচন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান বলেই আজকে বাংলাদেশ আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।'
তিনি বলেন, '২০০৮-এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের উন্নয়ন করেছে বলেই আজকে আমরা এই দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি। মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পেরেছি। মাতৃ-মৃত্যুহার কমাতে পেরেছি। মানুষ এখন আর ভিক্ষা করে চলবে না। নিজের মর্যাদা নিয়ে চলবে। সেটাই হলো আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যে অর্জনগুলো আমরা এনেছি, আজকে যে বাংলাদেশে পরিবর্তনটা হয়েছে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সেটা একমাত্র যেহেতু ২০০৮-এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে, ২০০৯-এ সরকার গঠন করে এই দীর্ঘ সময় একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল বলেই এই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।'
'একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। কাজেই একটা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল পরিবেশ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়ক—সেই কথাটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে,' বলেন শেখ হাসিনা।
এমআই