সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের নিকট ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন একদল শিক্ষার্থী। দাবি উত্থাপনকারী শিক্ষার্থীরা সকলেই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুর ২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে এসব দাবি পেশ করেন তারা।
এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন ও জয়শ্রী সেন উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উত্থাপিত দাবিসমূহ হলো: গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল চাই,বিদ্যুৎ বিভ্রাট সমস্যা নিরসন চাই, সুপেয় পানীর ব্যাবস্থা চাই, পর্যাপ্ত গতি সম্পন্ন ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা করতে হবে, সব হলের ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, লাইব্রেরীতে নিজস্ব বই সংরক্ষণ ও রাত ৮.৩০ পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে, জিমনেশিয়াম সপ্তাহে ৭ দিন খোলা রাখতে হবে, প্রশাসন কর্তৃক নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যাপ্ত আলো ও স্থাপনাগুলো নিয়মিত সংস্করণ করতে হবে, মেডিকেল এ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, বাসের পর্যাপ্ত শিডিউল নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রতিটি হল থেকে বিদায়ী ব্যাচের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবিগুলোর বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ' আপনাদের দাবিগুলো খুবই যৌক্তিক। তবে সমস্যা সমাধানের তো নির্দিষ্ট একটা পদ্ধতি রয়েছে। বললেই তো একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। কিছু সমস্যা আছে চাইলে এখনই সমাধান সম্ভব নয়। তার জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যেই এর আগের উত্থাপিত দাবিগুলো নিয়ে মিটিং করেছি।
সমস্যাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট অফিগুলোকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। কিভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়। সমস্যা সমাধানে সময় লাগতে পারে, কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে পারি যে সমস্যাগুলোর সমাধানে আমাদের কোনো গাফিলতি থাকবে না। কিন্তু দাবি আদায়ে আপনাদের যে পন্থা, কথায় কথায় গেইট আটকানো এটা তো ভালো না। গেইট বন্ধ করে কোনো দাবির বাস্তবায়ন হবে না।'
এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় তারা প্রক্টর অফিসে প্রক্টরের সাথে তাদের দাবিসমূহ নিয়ে আলোচনায় বসেন। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তাদের দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, 'শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামান্য পরিমান চলাচলে সমস্যা হোক এটা কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা গেইট আটকানোর মতো সিদ্ধান্ত তখনই নেয় যখন আর উপায় থাকে না। যখন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন তখন গেইট আটকানো কেনো, তার চাইতেও বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এখানে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, প্রথম সারির কর্মী। নিরুপায় হয়ে তারা সেখানে গিয়েছিলো।
তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। ছাত্রলীগের দাবিগুলোর সাথে তাদের দাবিগুলো এক। ছাত্রলীগের যে দাবিগুলো ছিলো তা যদি বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আর তাদেরকে এভাবে গেইট আটকাতে হতো না। ভবিষ্যতে যেন আর গেইট বন্ধ করা না লাগে আপনারা সেই পদক্ষেপ নিন।'
নাসিম আহমেদ জয় বলেন,'ছাত্রলীগের দেওয়া ৩৩ দাবির যদি সামান্য বাস্তবায়নও করতেন। তাহলে এই প্রশাসন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশাসন হতো। সাধারণ ছাত্রদেরকে আর ১২ দফা দাবি নিয়ে গেইট আটকাতে হতো না। তাদের ক্লাস আছে, পরীক্ষা আছে, তাদেরকে দাবি আদায়ে কেন আন্দোলন করতে হবে? এখানে যারা দাবি নিয়ে এসেছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময়ই থাকবে। আমরা তাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি।
আলোচনা শেষে প্রক্টর দাবিগুলো নিয়ে তাদেরকে উপাচার্যের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
প্রসঙ্গত, গতকাল বিকাল ৪টায় প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে আন্দোলন করেছিলেন তারা। এসময় ৪টার শিফটে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসগুলো ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে আটকা পড়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কুষ্টিয়া, শৈলকূপা ও ঝিনাইদহ শহরগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৩ঘন্টা অবরোধের পর প্রক্টরের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। আন্দোলন চলাকালীন তারা স্পষ্ট করতে পারেননি ঠিক কী দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।
সময় জার্নাল/এলআর