ইবি প্রতিনিধি:
দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম তার। জন্ম থেকে নেই দুটি হাতও। একদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অন্যদিকে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত জীবন। পড়ালেখা তো দুরে থাক স্বাভাবিক জীবনযাপনও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবুও থেমে থাকেনি তার পথচলা। পায়ের উপর ভরসা করেই ঘুরিয়েছেন জীবনের মোড়। হতাশাকে দূরে ঠেলে সকল বাঁধা ডিঙিয়ে এখন তিনি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।
জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে দৃঢ় মনোবল আর প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির গুণে নিজের জীবনের গল্পটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে চলা অদম্য ছেলেটি হাবিবুর রহমান। সোমবার (০৫ জুন) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেখা মেলে এই ভর্তি যোদ্ধার। স্বপ্ন পূরণে অংশ নিয়েছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ধর্মতত্ত্ব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাবিব রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের আবদুস সামাদের ছেলে। দরিদ্র কৃষক বাবার চার সন্তানের মধ্যে হাবিব তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হলেও বাড়িতে রয়েছে ছোট একটি বোন। সেও পড়ালেখা করছে।
জন্ম থেকে হাতবিহীন হাবিব ছোট বেলায় পরিবারের অন্যদের অনুপ্রেরণায় গড়ে তুলেছেন পা দিয়ে লেখার অভ্যাস। চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। এখন পর্যন্ত সকল স্তরেই করেছেন ভালো ফলাফল, রেখেছেন কৃতিত্বের সাক্ষর। প্রথম স্তরে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৪.৬৭ পেয়ে পাশ করেন। এরপর পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ৪.৬১ এবং ৪.৬৩ পেয়ে জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৪.৫৭ পেয়ে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বুনছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে বড় আলেম হওয়ার। রাখতে চান দেশ ও জনগণের কল্যানে ভূমিকা। এর আগে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও।
হাবিবুর বলেন, 'জন্ম থেকেই আমার দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এ পর্যন্ত আসতে নানান জনের নানান কথা শুনতে হয়েছে। নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু আমি তাতে কান দেইনি। নিজের আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি এবং পরিবারের অনুপ্রেরণায় আজ এতদূর আসতে পেরেছি। এখন আমার স্বপ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং বড় আলেম হওয়া।'
প্রতিবন্ধকতার স্বীকার অন্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,' ইচ্ছে থাকলেই সবকিছু সম্ভব। চেষ্টা করলেই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিবেন। চেষ্টা ছাড়া আসলে কোন কিছুই সম্ভব নয়। সবাইকে চেষ্টা করা উচিত। কষ্ট হবে, বিপদ আসবে। এর মাধ্যমে জয় করতে হবে।'ভর্তি পরীক্ষায় হাবিবুরের সাথে আসা তার এলাকার চাচা আজমল হোসেন বলেন, 'শারীরিক গঠনে অন্য আট-দশ জন ছেলের মতো না হলেও কোন দিক থেকেই সে পিছিয়ে নেই। ছোট থেকেই অনেক মেধাবী সে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে আটকে রাখতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে সে এতদূর পর্যন্ত এসেছে।'
এসএম