সাহেদুজ্জামান সাকিব:
প্রতিদিনের মতো আজকেও দায়িত্বরত কর্মীর ডাকে ঘুম ভাঙলো রাবেয়া বেগমের।
ঘুম থেকে উঠে সাহরি খেয়ে তসবিহ নিয়ে বসে গেলেন রাবেয়া বেগম। খানিক পরেই ফজরের আজান হবে। ফজর পড়ে আবার ঘুমিয়ে যাবেন তিনি। এর মধ্যেই একটি যুবতী মেয়ে এলো তাদের রুমে। মেয়েটি এই বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
খালাম্মা একটা সুখবর আছে
-কি সুখবর?
আজকে আপনার ছেলে আসবে।
-আজকে কি মা দিবস?
হ খালাম্মা আজকে মা দিবস।
খুশিতে রাবেয়া বেগমের চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। এই দিনটি রাবেয়া বেগমের কাছে দুই ঈদের চেয়েও বেশি খুশির। কারণ শুধুমাত্র এই দিনই তার ছেলে এবং বউমা তাকে দেখতে আসে।
আজ আর ফজর পড়ে ঘুমানো হলো না। ছেলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলেন বসে বসে।
রাবেয়া বেগমের একটি মাত্র ছেলে।
ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন তিনি। ছেলে যখন ক্লাস নাইনে উঠে তখনই তিনি তার স্বামীকে হারান। ছেলের পড়ালেখার খরচের জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো তাকে। তারপরও তিনি খুশি ছিলেন এই ভেবে তার ছেলে একদিন অনেক বড় চাকরি করবে। তখন আর তার কোন দুঃখ থাকবে না। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবে না।
আজ তার ছেলে ঠিকই একজন সরকারি অফিসার। কিন্তু মাকে তিনি তার সাথে রাখেন নি।ঢাকা শহরে মাকে রাখার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে চাননি তিনি, আর তার বউও চাইনি যে তার মা তাদের সাথে থাকুক! সাতপাঁচ ভেবেই মা'কে রেখে যান বৃদ্ধাশ্রমে। নানা ব্যস্ততায় খুব একটা সময় পান না মায়ের খোঁজ নেওয়ার।
সকাল ১১ টার দিকে প্রাইভেটকারে চড়ে মাকে দেখতে আসলেন রশিদ সাহেব। সাথে তার বউ বাচ্চা। বৃদ্ধাশ্রমের ওয়েটিংরুম রুমে বসতে দেওয়া হলো তাদের। খানিক পরেই ডেকে আনা হলো রাবেয়া বেগমকে। ছেলের কথা শুনেই ছুটে এলেন তিনি। দূর থেকে ছেলেকে দেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
রশিদ সাহেবের ছেলেটা রাবেয়া বেগম কে কখনো দেখেনি। সে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,বাবা এটা কে?
-এটা আমার মা,তোমার দাদী।
-কিন্তু তোমার মা এখানে থাকে কেন?
রশিদ সাহেব চুপ হয়ে গেলেন! খানিকবাদে ছেলেকে বললেন তুমি এসব বুঝবে না।
নাতীর এমন প্রশ্ন শুনে নীরবে কেঁদে উঠলেন রাবেয়া বেগম। তার খুব ইচ্ছে করছিলো নাতীকে একবার কোলে নিয়ে আদর করতে, কিন্তু সাহস পাননি কোলে নেওয়ার। মায়ের সাথে টুকটাক আলাপনের পর রশিদ সাহেব সপরিবারে ফটোসেশান করলেন তার মায়ের সাথে। যাওয়ার সময় মায়ের হাতে কিছু টাকা দিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার পথে গাড়িতে বসেই মায়ের সাথে তোলা ছবিটি ফেইসবুকে পোস্ট করলেন রশিদ সাহেব। ক্যাপশন লিখলেন "এই পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন আর কেহ নাই"।