শারমিন আক্তার কেয়া,কুবি প্রতিনিধি:
বৈদ্যুতিক চুলা (হিটার) জব্দ করতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলে প্রশাসন অভিযান চালানোর সময় তিনটি কক্ষের তালা ভাঙ্গার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়ে প্রশাসন এসব কক্ষের তালা ভেঙেছে, আর প্রশাসন বলছে অনুমতি নিয়েই তালা ভাঙ্গা হয়েছে।
এই ঘটনায়, সোমবার রাতে আবাসিক হলটির শিক্ষার্থীরা হলের সামনে এবং পরবর্তীতে হল সংলগ্ন রাস্তা আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। রাত সাড়ে আটটার দিকে হলের সামনে ও হল সংলগ্ন রাস্তায় নানা স্লোগানে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে হল প্রভোস্ট আসলে তারা রাস্তার অবরোধ ছাড়েন।
হলটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলেকট্রনিক চুলা জব্দ করতে হলের চারজন হাউজ টিউটর হলে উপস্থিত হন। এ সময় তৃতীয় তলায় অনেক রুমে তালা ঝুলতে দেখেন হাউজ টিউটররা। তখন রুমের বাইরে শিক্ষার্থীদের দেখে তালার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান এসব কক্ষের শিক্ষার্থীরা হলের বাইরে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে হলের বাইরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের হলে আসতে বলে হল প্রশাসন।
হলটির ছাত্রীদের অভিযোগ, এসব রুমের ছাত্রীরা আসার আগেই তিনটি রুমের তালা ভাঙে প্রশাসন। তবে আবাসিক শিক্ষকরা বলছেন, দুইটি রুমের তালা ভাঙা হয়েছে।
তৃতীয় তলায় তল্লাশি করা হাউজ টিউটররা জানান, রুমে রুমে তল্লাশি দেখে অনেক শিক্ষার্থী ইচ্ছা করে তালা দিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছিল যাতে রুম তল্লাশি না করা যায়। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য যে প্রচেষ্টা প্রভোস্ট বডি করছিল তা হতো না। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনুমতি নিয়েই তালা ভাঙা হয়েছে।
এই ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে আটটার দিকে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল গেইটে তালা লাগিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের ৩০৮ নম্বর রুমের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'হাউজ টিউটর ম্যাম আমাকে কল করে বলেছেন রুমে না আসলে আমার সিট ক্যান্সেল করবেন। অথচ আমি কাজে বাহিরে ছিলাম এবং বাকি রুমমেটরাও টিউশন, অন্যান্য কাজে বাহিরে ছিলো। শুধু মাত্র ইলেকট্রনিক চুলার জন্য আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি এরকম হুমকি দিলেন এবং আমাদের রুমের তালাও ভেঙে ফেললেন।'
হলের ৩১০ নম্বর রুমের আরও একজন শিক্ষার্থী জানান, 'আমি এবং আমার রুমের সিনিয়র আপুসহ বাকিরা কেউ হলে ছিলাম না, রুম তালা দেওয়া ছিলো আমাদের। তালা ভাঙার আগে আমাদের কারও কাছে কল পর্যন্ত আসেনি চাবি নিয়ে খোলার জন্য বা অনুমতির জন্য। আমি হলে পৌঁছে দেখি আমার রুমের তালা ভেঙেছে যদিও আমাদের রুম থেকে কোন প্রকার ইলেকট্রনিক চুলা পায়নি। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে রেইডের নাম করে এ ধরণের হেনস্তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। '
এ ঘটনায় তৃতীয় তলায় তল্লাশির দায়িত্বে থাকাদের মধ্যে একজন হলের হাউজ টিউটর কুলছুম আক্তার স্বপ্না বলেন, ‘আমাদের সামনে দিয়ে ৩০৮ নম্বর রুমের এক শিক্ষার্থী দ্রুত নেমে যাচ্ছিল। তখন আমরা স্টাফ দিয়ে তাকে রুমের সামনে আনি। এ সময় তার কাছে চাবি চাইলে তিনি তার কাছে চাবি নেই বলে জানান। আমরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাকে বলেছিলাম চাবি যেহেতু নেই তাহলে তালা ভাঙা হোক। তখন সে সম্মতি দিয়েছিল। সেই মোতাবেক তালা ভাঙা হয়েছে।
‘এছাড়া আমরা ৩১০ নম্বর রুমের তালা ভেঙেছি। সেই রুম থেকে চুলাগুলো লুকিয়ে ফেলেছিল। মাল্টিপ্লাগের সকেটগুলো দেখে আমরা ধারণা করছি এই রুমেও হিটার চালানো হয়েছে। আমরা ৩০৮ নম্বর রুম থেকে তিনটা এবং ৩০৯ থেকে দুইটা চুলা পাই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আসলে হলে খাবারের মান ভাল নেই, তাই শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রিক হিটার ব্যবহার করে। এখন সবার হিটার জব্ধ করেছে আর দুইটি রুমের তালা ভেঙেছে এসব কারণে মূলত অবস্থান কর্মসূচির মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবৈধভাবে হিটার কিংবা ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করা হয়। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য আমরা হলে তল্লাশি চালাই এবং ইলেকট্রিক চুলা টাইপের সকল কিছু জব্দ করি।’
বিনা অনুমতিতে রুমের তালা ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার কাছে যেটুকু তথ্য আছে সে অনুযায়ী অনুমতি নিয়েই রুমের তালা ভাঙা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া রুমের তালা ভাঙার কোন স্কোপ নেই।'
এমআই