সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নবনির্মিত ২১নং ছাত্র হলে ৪০টি আসন চেয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়। প্রক্টরের মাধ্যমে জাবি প্রশাসনের কাছে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের জন্য এসব আসন বরাদ্দ চেয়েছেন তিনি।
গত ৫ মার্চ গণরুম বিলুপ্তিসহ তিনদফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধকালে উপাচার্য এবং উপ-উপচার্য (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ এবং প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রক্টরের বক্তব্যে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
ছাত্রদের দাবির জবাবে এসময় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন। তখন আসন চাওয়ার বক্তব্য সংবলিত ভিডিওটি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে৷ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রক্টর বলেন, ‘পুরাতন ৮টি ছাত্র হল থেকে ১০০জন করে নিয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হলে ৮০০জনকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরও ২০০ আসন ফাঁকা রয়েছে। এই ২০০ আসনও বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছাত্রদের প্রয়োজন অনুসারে তা বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
ফাঁকা আসনগুলো কোন বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কিনা- আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, ‘কেন? তোমাদেরকে (প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের) তো দেওয়া হচ্ছে, দেওয়া হবে। তোমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে না এটা নিয়ে? অর্ণব (ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি) কথা হয়েছে না? অমর্ত্যের (ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গেও কথা হয়েছে। অমর্ত্য প্রায় ৪০জনের একটি তালিকা দিয়ে গেছে। তোমাদের সবার মিলে। বিভিন্ন হলে যারা থিয়েটার করে, অন্যান্য জায়গায় আছে।'
প্রক্টরের কাছে ছাত্র ইউনিয়ন নেতার আসন বরাদ্দ চাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রগতিশীল অন্যান্য সংগঠনগুলোর নেতৃস্থানীয়রা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, 'যদি প্রশাসনের কাছে আমাদের কথা বলে কেউ সিট চেয়ে থাকে তবে এইটা কোনভাবেই উচিত হয়নি। তবে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে সিট চাইতে হবে কেন? তারাও তো বৈধ শিক্ষার্থী। প্রশাসন তাদেরকেও সিট দিতে বাধ্য, কিন্তু তাই বলে কেউ নতুন হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট চাইতে পারে না। এটা রীতিমতো অন্যায়। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মতো তারা কোনভাবেই এটা করতে পারে না।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রিতম বলেন, ‘নতুন হলে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সিট এলোটমেন্ট দেয়ার বিষয়ে সাংস্কৃতিক জোট অবগত নয়। যদি কেউ প্রশাসনের কাছে সিট চেয়ে থাকে তাহলে এটা কখনোই উচিত না, কারণ প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা ভোগ করার কোন প্রয়োজন মনে করি না। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হল বরাদ্ধ দিয়েছে, আবদন করলে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা সিট পাবে, এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে এক্ষেত্রে কেউ প্রশাসনের কাছে সিট চেয়ে থাকলে এটা অযৌক্তিক এবং অনুচিত।’
এ বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, নতুন হলের এক হাজার আসনের মধ্যে ৮০০ শিক্ষার্থীর আবেদনের পর দু'শ ফাঁকা ছিল। তখন অমর্ত্য আমাদের বলে যে, তাদের কিছু শিক্ষার্থী আমবাগান, ইসলামনগরে কষ্ট করছে। তখন আমরা প্রভোস্টকে বলে তাদের জন্য কিছু সিট ম্যানেজ করে দেই।
২১ নং হল প্রভোস্ট ড. তাজউদ্দিন শিকদার এ বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা অন্য শিক্ষার্থীদের মতো সিটের জন্য সরাসরি হলে আবেদন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টা ডিল করেছে। প্রশাসন থেকে তালিকা দিয়েছে৷ তবে সংখ্যাটা ২৫ জনের মতো হবে।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, এখানে আমাদের বলতে আমার সংগঠনের বিশেষ কেউ নাই৷ হলগুলোতে যখন আবেদন চলছিল তখন মীর মশাররফ হলের অনেকের নাম লিস্টে আসেনি৷ তখন শামীমের মাধ্যমে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে৷ তারা যেহেতু গেরুয়া, ইসলামনগরে ভাড়া বাসায় থাকে, তাদের সমস্যা হচ্ছিলো। তাদের ২৯ জনের একটা তালিকা নিয়ে আমরা উপাচার্যের কাছে যাই৷ সেখান থেকেও সবাইকে দেয়া হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। মাত্র ১৭/১৮ জন পেয়েছে।
তবে দলীয় কর্মীদের জন্য সিট চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের সাথে লিয়াজোঁ করেছি বিষয়টা মোটেই এমন নয়। আমরা এখানে সংগঠনের ছোটভাই বা কারো জন্য সিট চাইনি। এই ৩০ জনের মধ্যে দলীয় কেউ নাই৷ সবাই ৪৮ বা ৪৯ ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, এ বিষয়টা বিভিন্ন ভাবে আমার কানে এসেছে৷ তবে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তারা সিট না পেলে তো আবেদন করেই নিতে পারতো৷ এমনটা করলে তারা নৈতিক অবস্থান হারাবে। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তারা কথা বলছে৷ সেখানে এই প্রক্রিয়ায় তারাও ঢুকে গেলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথাই বলতে পারবে না।
এমআই