সাইফ ইব্রাহীম, ইবি প্রতিনিধি:
আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ বারের মতো সাক্ষাৎকার দিতে ক্যাম্পাসে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির তলবে আজ সোমবার ক্যম্পাসে উপস্থিত হন তারা।
সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় অভিযুক্তদের প্রধান ফটক থেকে প্রক্টরের গাড়িতে করে নিয়ে এসে প্রশাসন ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করানো হয়। পরে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ের সভাকক্ষে শৃঙ্খলা কমিটির সামনে নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষ্য দেন তারা। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার শেষে ভুহক্তভোগীকেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় হল থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য নিয়ে আসা হয় । পরে আবার নিরাপত্তা দিয়ে তাকে হলে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'আজ ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষের সমর্থনে সাক্ষ্য নিয়েছি। তাদের লিখিত বক্তব্য ছাড়াও অন্য কোন বক্তব্য আছে কি না? তাদের মধ্যে দুই জন (মোয়াবিয়া জাহান ও হালিমা খাতুন উর্মি) নতুন বক্তব্য সংযোজন করেছেন। আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সকল কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ঈদের ছুটি শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নিজের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন অভিযুক্ত অন্তরা। এছাড়া নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমি আজ ক্যাম্পাসে এসেছি। আমার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দেননি।'
নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কার কথা উল্লেখ করলেও সাক্ষাৎকার শেষে নিঃসংকোচে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় তাকে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন তিনি। পরে দুপুর ২ টায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, 'আমরা গত মিটিংয়ে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আজকে তাদের গেট থেকে নিরাপত্তার সাথে নিয়ে এসেছি। কিন্তু যাওয়ার সময় তাদেরকে গাড়িতে উঠতে বলা হলেও তারা গাড়িতে ওঠেনি। তারা বলেছে আমরা হেটেই যাব। তারা আমাদের নিরাপত্তা নেননি।'
উল্লেখ্য, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরীকে রুমে ডেকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাাণিত হওয়ায় গত ১ মার্চ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এর নির্দেশনায় দোষী সাব্যস্ত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এমআই