এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে দালালের প্রলোভনে ও খপ্পরে পড়ে সৌদিআরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সেখানে যাবার পর নিখোঁজ রয়েছেন রোজিনা আক্তার (২২) নামের এক নারী। দুইমাস আগে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা হলেও এখন আর রোজিনার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রোজিনার বাবা-মা এখন দিশেহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের সহযোগীতায় রোজিনার যাতে খোঁজ পান সেই প্রত্যাশা করছেন তারা।
জানা যায় , ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর রেললাইন এলাকার দিনমজুর ইউনুস ফকিরের ১ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে রোজিনা ছোট। ৮ বছর আগে গার্মেন্টসে কাজের সন্ধানে রোজিনা ঢাকায় যায়। সে সময়ে একটি ফ্যাক্টরীতে সে কাজ করতো। কাজ করার সুবাদে রোজিনার সাথে পরিচয় হয় শেরপুর জেলার জনৈক ট্রাক চালক ওসমানের সাথে। ৬ বছর আগে ওসমানের সাথে রোজিনার বিয়েও হয়। বিয়ের পর থেকে রোজিনার উপর নানা অত্যাচার চালাতো স্বামী ওসমান। ফলে ছোট্র শিশুকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ী ফরিদপুরে। ঢাকায় চাকুরীর সুবাদে পরিচয় হয়েছিল হানিফ নামের এক মানব পাচারকারীর সাথে। সেই হানিফ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রোজিনাকে সৌদিআরবে পাঠানোর কথা বলে। দালালের কথায় রাজি হয়ে ফাঁদে পা দেয় রোজিনা। পরিবারের অমতে সে দুই বছর আগে সৌদিআরব চলে যায় গৃহকর্মীর ভিসা নিয়ে।
দীর্ঘ দুই মাস আগে সর্বশেষ রোজিনা কথা বলে তার মা হাসিনা বেগমের সাথে। সেই সময় ফোনে তার মাকে বলেছিলেন, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। সে আর বিদেশে থাকতে চায়না। তারাতারিই চলে আসবে। এরপর থেকেই আর কোন খোঁজ নেই রোজিনার। যে মোবাইল ফোনে রোজিনা কথা বলতো সেই ফোনটি এখন আর কেউ ধরেনা। সন্তানের কোন খোঁজ না পেয়ে এখন বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে রোজিনার অসহায় বাবা-মা।
সৌদিআরবে যাবার পর রোজিনা মাঝে মধ্যেই তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতো। সন্তানের খোঁজ ও নিতো। দালালের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বললেও রোজিনার পরিবার দালালের কোন ঠিকানা না জানাতে তারা টাকা আনতে পারেনি।
নিখোঁজ রোজিনার বাবা ইউনুস ফকির জানান , আমি ছোট কাজ করি। আমার বউ বাড়ীতে ঝি এর কাজ করে। এই দুইজনের টাকা দিয়া সংসার চালাই। আমার মেয়েকে যে দালাল বিদেশ পাঠাইছে তাকে ও পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি আমার মেয়েকে জীবিত কিংবা লাশ হলেও ফেরত চাই। যাতে আমার মেয়েকে শেষ বারের জন্য হলেও একটু দেখে শান্তি পাই।
নিখোঁজ রোজিনার মা হাসিনা বেগম জানান, আমি অনেক মানা করছি বিদেশ যাইতে। সে আমাদের কথা শুনেনি। দালাল তাকে বাড়ী করে দিবে, অনেক টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে বিদেশে পাঠায়। এখন আমার মাইয়্যাডার কোন খোঁজ নাই। আমি কার কাছে গিয়ে খোঁজ নিমুু, কোথায় যামু, দেশে হইলে খুঁজতাম। বিদেশে কুনহানে আছে, আমার মাইয়্যাডা বাইচ্যা আছে নাকি তাকে মাইরা ফালাইছে তাও জানিনা। আমি সরকারের কাছে দাবী জানাই, আমার কলিজার মাইয়াডারে যাতে আমার কাছে ফিরাইয়া আইন্যা দেয়।
ফরিদপুরের সচেতন সুধী মহলের দাবি , অসহায় ও হতদরিদ্র মহিলারা জীবন জীবিকার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যায় , শুধুমাত্র পরিবার সহ ডাল - ভাত খেয়ে বেচে থাকার জন্য । কিন্তু বিদেশে গিয়ে বেশিরভাগ শ্রমজীবি নারীরা বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হোন ।
তারা আরো জানান, মুসলিম দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশী নারী শ্রমিকরা সৌদি আরবে নির্যাতনের স্বীকার বেশী হয় । আমাদের দাবি , বাহিরের সব দেশেই যেন মহিলা শ্রমিকের ভিসা প্রদান করা বন্ধ করে দেওয়া হয় । কোন এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে রোজিনাকে পাঠানো হয়েছে ঐ ট্রাভেল এজেন্সির মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি ও তারা জানান । কারণ তিনিই ( মালিক) জানেন সৌদি আরবে কার কাছে অবস্থান করছে রোজিনা ।
এমআই