সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
বিতর্কিত শিফট পদ্ধতিতে আজ রবিবার থেকে শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার 'ডি' ইউনিটের অধীনে জীববিজ্ঞান অনুষদের মাধ্যমে শেষ হবে জাবির এবারের ভর্তিযুদ্ধে।
পাঁচ দিনব্যাপী এ ভর্তিযুদ্ধে আজ প্রথম শিফটে ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ) এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় শিফটে ‘সি-১’ ইউনিটের অধীনে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ঐদিন তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শিফট ‘সি’ ইউনিটের অধীনে কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট কমানো, ছেলে মেয়ে আলাদা শিফটে পরিক্ষা নেওয়া সহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে, বিতর্কিত শিফট পদ্ধতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, একসঙ্গে সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় শিফট পদ্ধতি রাখা হয়েছে।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে, শিফট পদ্ধতিতে বৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোন এক শিফট থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছেন আবার অন্য শিফট থেকে খুব কম শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছেন।
২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরিক্ষার 'বি' ইউনিটের অধীনে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ৫টি শিফটে অনুষ্ঠিত 'বি' ইউনিটের পরীক্ষায় ৩৮৬ টি আসনের মধ্যে শুধু ৫ম শিফট থেকেই মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৭৫ জন, যা মোট আসনের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে প্রথম শিফটে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন মাত্র ৩৪ জন, যা মোট আসনের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া দ্বিতীয় শিফটে ৫৮ জন, তৃতীয় শিফটে ৫১ ও চতুর্থ শিফটে ৬৭ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন।
ভর্তি পরিক্ষার্থীদের দাবী, জাবিতে একই ইউনিটের পরিক্ষা কয়েকটি শিফটে অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে কোনো শিফটে প্রশ্ন সহজ আবার কোনো শিফটে প্রশ্ন কঠিন হচ্ছে। ফলে, প্রতিযোগিতামূলক এ ভর্তি পরিক্ষায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একই অনুষদের পরীক্ষা বিভিন্ন শিফটে নেওয়ায় মেধা মূল্যায়নে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
ভর্তি পরিক্ষায় সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০ জন বিএনসিসি এবং ৫০ জন রোভার স্কাউটস ক্যাডেট নির্দিষ্ট ভবনের সামনে উপস্থিত থাকবে। পরিক্ষা চলাকালীন প্রতিটি পরিক্ষা কেন্দ্রের সামনে অতিরিক্ত আরো পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়নসহ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৫০ জন পোশাকধারী সশস্ত্র ও সাদা পোষাকদারী পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া অতিধিক ৬০ জন আনসার সদস্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া, পরিক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে যানচলাচল সম্পর্কে তিনি আরো জানান, বিশমাইল গেট দিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গাড়ী প্রবেশ এবং জয়বাংলা (প্রান্তিক) গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ মাঠ, রাঙ্গামাটি পানির ট্যাংকির মাঠ, বিশমাইল খেলার মাঠসহ জাবি স্কুল-কলেজ থেকে উত্তরদিকের সেনওয়ালিয়া পর্যন্ত অবস্থিত ফাঁকা জায়গাগুলো গাড়ী পাকিংয়ের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় স্টিকার সংবলিত গাড়ী মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেইট দিয়ে প্রবেশ করবে বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান বলেন, প্রথম শিফটে ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ) এ অংশগ্রহণ করবেন ৫ হাজার ৮৪৩ জন, দ্বিতীয় শিফটে ‘সি-১’ ইউনিটের অধীনে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা বিভাগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন ৫ হাজার ৬৫ জন, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ এই চার শিফটে ‘সি’ ইউনিটের অধীনে কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় মোট ৪১ হাজার ৪৫৫ জন ভর্তিচ্ছু লড়াই করবেন।
বিতর্কিত শিফট পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল চেয়েছিলো সাভার এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিক্ষা নিতে। কিন্তু সেখানে একই ইউনিটের সব শিক্ষার্থীর একসাথে পরিক্ষা নেওয়ার ক্যাপাসিটি না থাকায় শিফট পদ্ধতিতে পরিক্ষা নিতে হচ্ছে। ইউজিসি থেকে বলেছে আগামী বছর থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা নিতে। এই বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন সর্বমোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ১০ জন শিক্ষার্থী। মোট আসন সংখ্যা রয়েছে এক হাজার ৮৮৪টি। সে হিসাবে প্রতি আসনের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ১৩৬ জন।
এমআই