সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার রেশ না কাটতেই নতুন করে আবার নবীন এক ছাত্রকে নগ্ন করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে বোতল কেটে তার সাথে সঙ্গম করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
সোমবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ২টায় লালন শাহ হলের গণরুমে (৩১৬ নং কক্ষ) এই র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ছাত্র।
ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযোগপত্রে সরসরি নাম উঠে এসেছে দুই অভিযুক্তের। তারা হলেন ফাইন আর্টস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আরিফ হাসান ও তন্ময় প্রশ্বাস। উভয়েই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।
হলের শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর গণরুমে থাকতেন ভুক্তভোগী। বাবার সাথে কথা বলতে ১৮ জুন রাতে ছাঁদে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় তাকে দেখে পরিচয় জানতে চান সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা দুই অভিযুক্ত আফিফ ও তন্ময়সহ আরও কয়েকজন। জুনিয়র হিসেবে পরিচয় দিলে তাকে রাত ২টায় ১৩৬ নং রুমে (গণরুম) দেখা করতে বলেন অভিযুক্তরা। পরে সেখানে গেলে ম্যানার শিখানোর নামে ভুক্তভোগীর উপর
এক ঘন্টা যাবৎ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে একটি বোতল কেটে গার্লফ্রেন্ড মনে করে তার সাথে সহবাস করতে বলা হয় ভুক্তভোগীকে। বলা হয়, ‘বোতলটা তোর বান্ধবী, তুই এর সাথে সেক্স কর’। তখন সে তা করতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে জোর করে উলঙ্গ করে দেন এবং বোতলের সাথে যৌন সঙ্গমে বাধ্য করেন। এছাড়াও নগ্ন অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দেখাতে বাধ্য করা হয় ভুক্তভোগীকে। শেষে তার হাতে একটি লোহার পাইপ দিয়ে এক সিনিয়রকে মারতে বললে তিনি তা না করে দৌড়ে রুম থেকে পালিয়ে জিয়া মোড় সংলগ্ন পুকুর পাড়ে চলে যান।
পরে এ বিষয়ে বিভাগের সিনিয়র ভাই ও একই হলের শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফাহিম ফয়সালকে ফোনে অবহিত করেন তিনি। ফাহিম তাকে নিয়ে হল গেইটে গেলে অভিযুক্তরা নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে তাকে মারতে শুরু করেন। নিজেকে রক্ষা করতে সেখান থেকে দৌড়ে জিয়া মোড়ের দিকে গেলে ধাওয়া করে আবারও এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন তারা। এসময় তার গায়ের জামা ছিড়ে যায় ও চশমা ভেঙে যায়।
পরে রাত সাড়ে তিনটায় ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের হলের তৃতীয় তলায় ডাকেন। সেখানেও অভিযুক্ত আফিফ ভুক্তভোগীর উপর চড়াও হলে দৌড়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের রুমে ঢুকে যান তিনি। সেখানেও জেরা করতে করতে সম্পাদকের সামনেই আরেক দফা মারধর করা হয় তাকে। পরে সম্পাদক বিষয়টি প্রাথমিকভাবে মীমাংসা করে দেন। এ ঘটনার পর ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বর্তমানে হল ছেড়ে বাইরের মেসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মারধর ও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে দুই অভিযুক্ত গণমাধ্যমকে বলেন, 'মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সাথে কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছিলো। পরে নাসিম আহমেদ জয় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।'
বিষয়টি নিয়ে নাসিম আহমেদ জয়ের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেদিন রাতে তাদের মধ্যে ঝামেলার বিষয়টি শুনে মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। রুমে কি হয়েছিলো আমার জানা নেই, তবে শুধুমাত্র গেইটে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল এতটুকুই জানি।'
এছাড়া অভিযোগ করার দেড় ঘন্টার মাথায় ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে নিয়েছেন বলেও জানান ছাত্রলীগ সম্পাদক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ছাত্র-উপদেষ্টা ও প্রক্টরের সাথে কথা বলে গতকাল বিকেলেই অভিযোগ তুলে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এদিকে অভিযোগ উইথড্র করা হয়েছে এই মর্মে কিছুই জানেননা ছাত্র-উপদেষ্টা ও প্রক্টর। তাদের কাছে এ বিষয়ে কেউই আসেনি বলে জানান তারা। তবে এর আগে গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগের কার্যালয়ের সামনে ওই ছাত্রের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদককে কথা বলতে দেখা যায়।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, 'উইথড্র এর বিষয়ে এখনও কেউ আমাদের কিছুই বলেনি। অভিযোগ পত্রটি আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনারা চাইলে তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।'
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি এখনও দেখিনি সে কি লিখেছে। অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
সময় জার্নাল/এলআর