ডা. কামরুল হাসান সোহেল :
দেশে যতগুলো ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে তার প্রায় কোন হাসপাতালেই জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নাই। যদি জনবল নিয়োগ দেয়া হতো তাহলে অনেক চিকিৎসক,নার্স সহ অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো এবং এলাকার জনগণ আরো ভাল স্বাস্থ্যসেবা পেত।
কোন কোনটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ১০/১৫ বছর আগে, প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি, এম্বুল্যান্স সব আছে কিন্তু এখনও সেই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নাই।
যেমনঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৫ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আজো জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নাই। এমনকি এখন পর্যন্ত উদ্বোধনই করা হয়নি, তালাবদ্ধ হয়ে পরে রয়েছে সব। পরে থেকে নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হচ্ছে সরকারি টাকায় কেনা প্রায় কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। এমনকি বিল্ডিংয়েও ফাটল ধরেছে। পরে থেকেই সব নষ্ট হলো
তাহলে এই উন্নয়নে কে লাভবান হলো? কি কাজে আসলো এই উন্নয়ন? এলাকার জনগণের কোনো লাভ হয়েছে? ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা সহ কুমিল্লা জেলার ৫০ শয্যায় উন্নীত প্রায় সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ও প্রায় একই চিত্র।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি বর্ধিত জনবল নিয়োগ এ সম্মতি জ্ঞাপন না করে তাহলে কেন সরকারি অর্থের এই অপচয়?
জনবল নিয়োগ নিশ্চিত না করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যেতে পারে। কেননা অবকাঠামো হয়তো দ্রুত নষ্ট হবেনা। তবে যেই ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় তা ও বছর পাঁচেকের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়,বিল্ডিং এ ফাটল ধরে, কাঠের দরজার চৌকাঠ ঘুনে ধরে নষ্ট হয়ে যায়।জনবল থাকলে হয়তো রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত।
জনবল নিয়োগ না দিয়ে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে কি লাভ হলো? কার লাভ হলো? ওটি রুম, এসি, লেবার রুম, নতুন নতুন বিছানাপত্র,দামী,দামী সব যন্ত্রপাতি এগুলো কিনে কি লাভ হলো? বছরের পর বছর অযত্ন আর অবহেলায় পরে থেকে সব নষ্ট হলো। হয়তো এখন আবার সব নতুন করে কিনতে হবে।অবকাঠামোর ও সংস্কার করতে হবে।
অবকাঠামোর উন্নয়নের পরপরই আগে জনবল নিয়োগ দিতে হবে তারপর যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে।কেননা টাকা থাকলে সব যন্ত্রপাতি কিনে উপজেলায় পৌঁছাতে সাত দিনের বেশি সময় লাগার কথা না।এইভাবে সরকারি অর্থের অপচয় করার কোন মানেই হয় না।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যদি পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হতো তাহলে আরো প্রায় ৮০০০/১০০০০ এর বেশি চিকিৎসক নিয়োগ পেত,অনেক সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্যাকমো সহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর অনেক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হতো।
সুষম উন্নয়ন ও সমন্বিত উন্নয়ন করলে সেই উন্নয়নে সুফল মেলে কিন্তু এমন সমন্বয়হীন এলোমেলো উন্নয়ন করলে তা কারো কোন উপকারেই আসেনা। শুধুমাত্র যারা কেনাকাটার সাথে জড়িত থাকেন তাদের পকেটের উন্নয়ন ছাড়া আর কারো কোন উন্নয়ন হয়না।