নিজস্ব প্রতিনিধি:
শুরু হয়েছে এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। সেইসাথে রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু মশা নিধনে তেমন কিছুই করতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
মশা নিধনে কাজে আসছে না তাদের কোনো পদ্ধতিই। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দুই সিটির কার্যক্রম।
কীটতত্ত্ববিদরা জানান, বর্ষা মৌসুমে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কারণ, যেখানেই বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আবার এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা প্রজনন করছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি।
সাধারণত জুন তথা বর্ষার শুরু থেকে ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়তে থাকে। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত পাত্রে জমে। এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়টা ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরা হয়।
নগরে মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এ কাজে ব্যর্থ। তবে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দাবি, সাধারণত এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বাসায় ঢুকে এডিস মশা নিধনের সক্ষমতা করপোরেশনের নেই। তাই এ মশা নিধনে নগরের সব বাসিন্দাকে সচেতন হতে হবে। নিজ বাড়ির আঙিনা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। জনসচেতনতা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধন সম্ভব নয়।
গত ১৯ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৩২৩ জন। এদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২৬০ জন ও ঢাকার বাইরের ৬৩ জন।
এভাবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ১৯ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৩১ জন। এদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৬৭ জন। মারা গেছেন ৩৬ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মারা যাওয়া রোগীদের অধিকাংশই ঢাকা শহরের বাসিন্দা।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেই ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন।
ডিএনসিসির এত কর্মসূচির পরও নগরে মশা কমছে না বলে অভিযোগ করেন নাগরিকেরা। নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান জানান, গত ২ জুন তার ভাগনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর দুদিন পর তার বোনেরও জ্বর আসে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এ এলাকার আরও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রতিদিন ঢাকার হাসপাতালগুলোতে যত সংখ্যক ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ঢাকার বাসিন্দা নন বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেঙ্গুরোগী ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তিতে ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাসার ঠিকানা ব্যবহার করছেন।’
তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা হয়। নগরের সবার সহযোগিতা পেলে বা সচেতন হলে মশা থাকবে না।’
সময় জার্নাল/এলআর