রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্যামনগরের মৌয়াল মন্টু গাজীকে ‘বাঘে খায়নি’, গুমের অভিযোগ পরিবারের

শুক্রবার, জুন ২৩, ২০২৩
শ্যামনগরের মৌয়াল মন্টু গাজীকে ‘বাঘে খায়নি’, গুমের অভিযোগ পরিবারের

মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

জীবিকার তাগিদে ৯ সহযোগীর সঙ্গে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে গিয়েছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা পল্লীর মৌয়াল নেছার আলী ওরফে মন্টু গাজী। পরে তাঁর অন্য সঙ্গীরা ফিরে এসে জানান, তাঁকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। তবে শরীরের কোনো অংশ বা বাঘে ধরার মত প্রমাণ দেখাতে পারেননি তারা। এখন মন্টুর পরিবার অভিযোগ করছে, স্থানীয় মহাজন আবিয়ারের লোকজন তাকে অপহরণের পর গুম করেছে। তবে তা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।

নিখোঁজ মৌয়াল নেছার আলী ওরফে মন্টু গাজী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চকবারা গ্রামের মোঃ সাহাবুদ্দীন গাজী ওরফে সাবুদ আলীর ছেলে।
এদিকে এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল মন্টু গাজীর পরিবার। পরে মন্টুর ভাই আবুল হাসান বাদী হয়ে ২০ জুন ১১ জনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় একটি নিয়মিত মামলা করেছেন। 

বুধবার ( ২১ জুন) রাতে মিজানুর রহমান ও রুহুল আমিন নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য আসামীরা হলেন–, মহাজন ও গাবুরা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমান, মালেক, মোক্তার মাসুম মন্টু, কুমারেশ রায়, আব্দুল মান্নান গাজী, ওবায়দুল্লাহ, জিএম আলম হোসেন, আশিকুজ্জামান ও সোহেল।

আসামীরা সাতক্ষীরার আশাশুনির লাঙলদাড়িয়া, কালিমাখালী ও শ্যামনগরের বংশীপুর ও হায়বাদপুর এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তার মিজানুর সাতক্ষীরার একটি দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত। মহাজন আবিয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাকে মামলার আসামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন বলেন, মন্টুর ভাই আদালতে মামলা করেন। পরে থানায় মামলা রেকর্ড হলে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। আবিয়ারকে গ্রেপ্তার করা গেলে মূল রহস্য জানা যাবে।

প্রসঙ্গতঃ গত ১ এপ্রিল মৌয়ালরা মহাজন আবিয়ারের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সুন্দরবনে যান। ১৬ এপ্রিল ভারতীয় বনরক্ষীদের হাতে মধু, নৌকাসহ সর্বস্ব হারান বলে দাবি মৌয়ালদের। পরে নদী সাঁতরে ও পায়ে হেঁটে তালপট্টি পৌঁছান তারা। ১৯ এপ্রিল তালপট্টি থেকে বাঘ মন্টুকে ধরে বনের গহিনে নিয়ে যায় বলে দাবি তঁদের। তবে ফিরে আসা ব্যক্তিদের কেউ জায়গাটি চিহ্নিত করতে যেতে না চাওয়ায় বন বিভাগ ও মন্টুর পরিবার মরদেহ উদ্ধারে যেতে পারেনি। নিখোঁজ মন্টু গাজীর সহযোগী মৌয়ালদের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রহস্যের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 
মন্টুর ভাই আবুল হাসান বলেন, চালানে যাওয়ার আগে দাদনের টাকা ও মধুর দাম নির্ধারণ নিয়ে মহাজন ও তার ভাইয়ের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। প্রভাবশালী হয়েও সবার সামনে অপমানিত হওয়ার জেরে সুন্দরবনে যাওয়ার পর তার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে।

তবে গ্রেপ্তার রুহুলের ছেলে গফুর আলী দাবি করে বলেন, ভারতীয় বনরক্ষীদের হাতে সব হারানোর পর চার দিন পায়ে হেঁটে মৌয়ালরা তালপট্টি এলাকায় গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। পর বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ মন্টু বিশ্রাম নেওয়ার সময় বাঘে ধরে নিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত মৌয়ালরা বাড়ি ফিরে আসায় শরীরের অংশ নিতে পারেননি। অর্থ আদায়সহ হয়রানি করতে বাবাকে এতে জড়িয়েছে তারা।

এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আবিয়ার রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে পুলিশ আসার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই দাবি করে আবিয়ারের স্ত্রী হাজেরা খাতুন মিলি বলেন, নৌকার মাঝিকে চালানের টাকা বুঝিয়ে দিলেও কারা বনে ঢুকছে সেটি আবিয়ার জানতেন না। তার স্বামীর সঙ্গে কারও বাদানুবাদও হয়নি। মন্টুর সৎ ভাই আবুল হাসান ভিন্ন উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন। বনজীবীরা বাঘে ধরার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও পূর্ববিরোধের জেরে তার স্বামীকে মামলার আসামী করা হয়েছে।
এদিকে মন্টু গাজীর স্ত্রী সফিরণ বেগম বলেন, স্বামীর ভাইয়েরা তাকে দিয়ে মামলা করাতে না পেরে নিজেরা করেছেন। অন্য মৌয়ালদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য বেরিয়ে আসবে। স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তিনিও জানতে চান।
তবে ঘটনা জানার পর অভিযান চালিয়ে বাঘে নেওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানান বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন, অজ্ঞাত কারণে মৌয়ালের পরিবারও যোগাযোগ করেনি। নিখোঁজ ব্যক্তির নাম ইস্যুকৃত পাসে ছিল না। অভয়ারণ্য বা ভারতীয় সুন্দরবনে যাওয়ায় হয়তো বন বিভাগকে পাস কাটিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়া সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসছে। অহেতুক কেউ যেন হয়রানি না হয় বা কোন অপরাধী পার না পায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল