শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিগোজিন বেলারুশে, মার্সেনারিরা ফিরছে ঘাঁটিতে, কোনো ব্যবস্থা নয়: মস্কো

রোববার, জুন ২৫, ২০২৩
প্রিগোজিন বেলারুশে, মার্সেনারিরা ফিরছে ঘাঁটিতে, কোনো ব্যবস্থা নয়: মস্কো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ওয়াগনারের মস্কোমুখী অগ্রগতি থামানো এবং তার বিনিময়ে বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো’র মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের সঙ্গে আজ সারাদিন ধরে আলোচনা করেছেন। এই সংলাপের প্রেক্ষিতে বিদ্রোহে ক্ষান্ত দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সম্মত হন প্রিগোজিন।

ঘাঁটিতে ফিরে যেতে রোস্তভ শহরের দক্ষিণ সামরিক জেলার সদর দফতর থেকে বেরিয়ে এসেছে ভাড়াটে ওয়াগনার যোদ্ধারা। 

বিদ্রোহী রাশিয়ান ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপ রক্তক্ষয় এড়াতে মস্কোর দিকে এগোনো বন্ধ করে নিজেদের ঘাঁটিসমূহে ফিরে যেতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ-এর।

এক অডিওবার্তায় প্রিগোজিন বলেছেন, রক্তক্ষয়ের ঝুঁকি থাকায় ওয়াগনার যোদ্ধারা ফেরার পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

'২৪ ঘণ্টায় আমরা মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এখন এমন একটা সময় হয়েছে যখন রক্তক্ষয় শুরু হতে পারে। তাই, রুশ রক্তপাত ঘটতে পারে — এ বিষয়টির সম্পূর্ণ দায়ভার নিয়ে আমরা রণক্ষেত্রের ঘাঁটিগুলোতে ফিরে যাচ্ছি,' শনিবার টেলিগ্রাম-এ এক অডিওবার্তায় বলেন তিনি।

এদিকে, ওয়াগনার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় এক চুক্তির অধীনে 'সশস্ত্র বিদ্রোহের প্ররোচনা' দেওয়ার অভিযোগে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যাবেন এবং ওয়াগনার যোদ্ধারা, যারা বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিলেন, তারাও কোনো শাস্তি বা পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন না। কারণ এর আগে তারা রাশিয়ার হয়ে কাজ করেছেন, সেই কাজ ও পরিষেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে এই ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেমলিন।

দক্ষিণ সামরিক জেলার সদর দফতর ত্যাগ করেছেন ওয়াগনার ভাড়াটে প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ছবি: রয়টার্স।
ওয়াগনার বিদ্রোহের ঘটনাকে পেসকভ 'দুঃখজনক' হিসেবে অভিহিত করে আরও জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুমোদন নিয়েই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন লুকাশেঙ্কো; কারণ প্রিগোজিনকে তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের সঙ্গে শনিবার সারাদিন ধরে আলোচনা করেছেন। এই সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রোহে ক্ষান্ত দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সম্মত হন প্রিগোজিন।

লুকাশেঙ্কোর প্রেস সার্ভিস জানিয়েছে, আলোচনার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মতি ছিল।

বেলারুশের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'তার বাহিনীর মস্কো অভিমুখে যাত্রা বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন প্রিগোজিন। একইসঙ্গে, উত্তেজনা প্রশমনে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।' 

দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি অনুসারে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়েছে ওয়াগনার যোদ্ধারা। কিন্তু, প্রিগোজিন ও তার ভাড়াটে সেনাদের আর কী কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।

এর আগে শনিবার (২৪ জুন) মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল ওয়াগনার সেনাবহর। তাদের থামাতে এক পর্যায়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী।

পুতিনের সাবেক মিত্র প্রিগোজিনের বাহিনী মস্কোর প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। রাশিয়ার রোস্তভ শহর দখল করে সেখান থেকে মস্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এটি।

এ ঘটনায় নিজের ২৩ বছরের শাসনকালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিদ্রোহ দমনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এটি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে 'একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটনের' অভিযোগ আনবে।

যাত্রা শুরুর পর ওয়াগনার গ্রুপ রোস্তভ ও মস্কোর মাঝামাঝি অবস্থিত ভোরোনেজ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ে রুশ সেনাবাহিনী। কিন্তু সার্বিকভাবে মহাসড়কে বিদ্রোহীদের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পুতিন যেন পশ্চিমাদের ওপর কোনো দোষ চাপাতে না পারেন, তাই জনসমক্ষে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি মার্কিন কর্মকর্তারা।

ওয়াগনার গ্রুপ মস্কোর দিকে এগোতে শুরু করার পর মস্কোজুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। রাজধানীর অনেক জায়গায় ব্যারিকেড বসানো হয়।

বিবিসি'র সংবাদে জানানো হয়েছিল, আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত মস্কো এলাকায় ঘরের বাইরে যেকোনো ধরনের গণসমাবেশ, অনুষ্ঠান ইত্যাদি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর আগে মস্কোর মেয়র নাগরিকদেরকে শহরে না বেরোতো আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তার লোকজন 'বিচারের জন্য অগ্রসর হচ্ছে' বলে মন্তব্য করে প্রিগোজিন বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য কমান্ডারদের অপসারণ করা হবে।

ক্রেমলিন থেকে এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য, হাজার বছরের ইতিহাসের একটি রাষ্ট্র রাশিয়ায় থাকার অধিকারের জন্য লড়াই করছি।'

'যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্বাসঘাতকতার পথে পা দিয়েছে... যারা ব্ল্যাকমেইল এবং সন্ত্রাসী পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, তাদের শাস্তি অনিবার্য,' সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন তিনি।

ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন দ্রুত পুতিনের বক্তব্যের জবাব দিয়ে বলেন, তার এবং বাহিনীর সদস্যদের এসবে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না।

প্রিগোজিন এর আগে একটি অডিও বার্তায় বলেছিলেন, 'রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলে প্রেসিডেন্ট ভুল করেছেন। আমরা দেশপ্রেমিক। আমরা দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং লড়াই করছি। আমরা চাই না দেশ দুর্নীতি আর প্রতারণার মধ্যে থাকুক।'

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়ছে ওয়াগনার বাহিনী। গত তিন মাস ধরে ক্রেমলিনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় এটি। অস্ত্র সরবরাহে অবহেলা নিয়ে বারবার অভিযোগে তোলে দলটি।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল