নিজস্ব প্রতিনিধি:
আজ বুধবার ভোর থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েছেন পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারাও।দেশের উপকূলীয় তিন বিভাগ চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার (২৮ জুন) ভোর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। তবে সকাল আটটার পর বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার আকাশ মেঘলাসহ অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
এদিকে, পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে আজও ঢাকা থেকে গ্রামে ছুটছেন অনেকেই। তবে বাসা থেকে বের হয়ে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা। অনেককেই দেখা যায় বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে রাস্তার পাশে বাসের অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ আবার বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় বাস, ট্রেন বা লঞ্চের জন্য টার্মিনালে ছুটছিলেন।
কথা হয় চট্টগ্রামগামী বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে বনশ্রীতে অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। বেলায়েত বলেন, কিছু কাজ থাকায় একটু দেরি করে বাড়ি যাচ্ছি। বাসে টিকিট করা থাকলেও যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হচ্ছে। এর ওপর আবার যোগ হয়েছে বৃষ্টি। কাউন্টারে জায়গা কম, অনেক মানুষ অপেক্ষা করছে। তাই বাধ্য হয়েই বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজতে হচ্ছে।
ঈদযাত্রার শেষ দিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। সকাল থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদা যেমন বেশি ছিল, আবার কমিউটার ট্রেনেও ছিল বাড়তি চাপ। স্টেশনে আসা এসব যাত্রীরা সকালের বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এসেছেন স্টেশনে। বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক যাত্রী।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে আসা শাহরিয়ার আলম বলেন, সকালে স্টেশনে আসার জন্য যখন বের হবো তখনই বৃষ্টি শুরু। বৃষ্টির মধ্যে সকালে সিএনজিও পাচ্ছিলাম না। শেষে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে স্টেশনে আসলাম।
রাজারবাগ থেকে আসা মমিনুল মন্ডল বলেন, বৃষ্টিতে ভিজেই স্টেশনে আসতে হয়েছে। গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাবো। ট্রেন ধরতে না পারলে বাড়ি যাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়েছি যেন ট্রেন মিস না হয়।
নাজনিন বেগম নামের এক নারী বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি ঈদ করতে। ট্রেনে গেলে ভোগান্তি কম হয়। কিন্তু আজ সকালেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনে আসতে কষ্ট হয়েছে।
রাজধানীর বংশাল থেকে ছোট শিশুকে নিয়ে আসা রিনা আক্তার বলেন, বৃষ্টির কারণে বাচ্চাকে নিয়ে সিএনজিতে এসেছি। ভাড়া বেশি নিয়েছে। তারপরও কিছু করার নেই। ঈদ করতে বাড়িতেতো যেতে হবে।
ঘরে ফেরা মানুষের মতোই ভোগান্তিতে পড়েছেন পশুর হাটের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির কারণে সকালে হাটে ক্রেতাও তেমন নেই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের।
এদিকে, দেশের উপকূলীয় তিন বিভাগ চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহসাপতিবারের মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার বিভাগেও বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উত্তর উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ছত্তিশগড় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ও রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এলআর