শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপির অপকর্ম-দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়

সোমবার, জুলাই ৩, ২০২৩
বিএনপির অপকর্ম-দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপির অপকর্ম-দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সিটি নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়রদের আগামী ৫ বছরের জন্য শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এই ৩ সিটির নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একবার ভেবে দেখুন এ দেশে আমার বাবা-মা, ভাইয়ে হত্যা হয়েছে আর সেই খুনীদের বিচার না করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, বিচারের হাত থেকে তাদেরকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম বাবা-মা, ভাইদের হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না।'

তিনি বলেন, '১৯৮১ সালে এসে আমি মামলা করতে গেছি, আমাকে বলেছে যে, এদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না। এদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। আজকে যখন কোনো হত্যাকাণ্ড হয়, আমার কাছে যখন অনেকে বিচার চায় আমি শুধু ভাবি, আমাদের তো বাবা-মা হত্যার বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাও ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলাম বলেই সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে এই খুনীদের বিচার করেছি।'

'আমি এমন একটি দেশে পা রেখেছিলাম যেখানে খুনীরাই ছিল ক্ষমতায় আর ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। জিয়াউর রহমান তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়েছিল, যারা একাত্তর সালে আমার মা-বোনদের রেইপ করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। সেই তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়েছিল,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছিলেন—দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত করবেন, উন্নত সমৃদ্ধ করবেন সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি প্রচেষ্টা চালাই। সারা বাংলাদেশ আমি ঘুরি। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। কতবার আমার ওপর হামলা হয়েছে।'

'সর্বশেষ আপনাদের মনে আছে গ্রেনেড হামলা, সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। ১৩টি গ্রেনেড ছুড়েছিল। আমি জানি না কীভাবে বেঁচেছিলাম। আমার নেতাকর্মীরা মানব ঢাল করেই আমাকে বাঁচিয়েছে বারবার। প্রতিটি ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে। জানি না আল্লাহ হয়তো কিছু কাজ দিয়েছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ করার জন্য বারবার আমাকে রক্ষা করেছেন,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেহেতু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম, বাংলাদেশের কিছু উন্নয়ন করেছিলাম। কিন্তু পরে আমার ২০০১-এ বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ—এমন কোনো অপকর্ম নাই না করেছে। ঠিক একাত্তর সালে যেভাবে আমাদের মা-বোনদের গ্রামের পর গ্রাম রেইপ করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে, মানুষ খুন করা হয়েছে, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, যারা নৌকায় ভোট দিয়েছিল তাদের ঠিক সেভাবেই অত্যাচার করা হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'কারো চোখ তুলেছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুঁড়া করা হয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘর-বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কাটা হয়েছে, সব কিছু দখল করা হয়েছে—সেভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। তারপর মিথ্যা মামলা দেওয়া, কারাগারে বন্দি করা, অনেক নেতাকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন। আমার ওপরই তো কতগুলো মিথ্যা মামলা দিয়েছিল! এতগুলো উন্নয়নের কাজ তারা নষ্ট করে দিয়েছিল।'

আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০১-এ আসার পর থেকে সন্ত্রাসী তাণ্ডবই ছিল তাদের একমাত্র কাজ। অর্থ আত্মসাৎ করা, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, মানুষের ওপর নির্যাতন, লুটপাট, সম্পদের মালিক হয়েছিল তারা হাজার হাজার কোটি টাকার। তাদেরই অপকর্ম-দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়। দুটি বছর এ দেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করে। যা হোক, সেই ইমার্জেন্সি সরকার বাধ্য হয়েছিল নির্বাচন দিতে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'নির্বাচিত হয়ে বারবার ক্ষমতায় এসেছি বলে একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে, স্থিতিশীলতা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের এই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। গ্রামে গ্রামে আগে মানুষের যে হাহাকার ছিল, সেই হাহাকার আর নেই এখন। আমরা বলেছিলাম, প্রত্যেক গ্রাম শহর হবে, বাংলাদেশের মানুষ নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে। আমরা কিন্তু সেটা দিতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও আরও উন্নতি আমাদের করতে হবে।'

আওয়ামী লীগ শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের উপার্জন বেড়েছে। টুঙ্গিপাড়ার মতো অজপাড়া গাঁ, যেখানে এমন এমন এলাকা ছিল মানুষ খেতে পেত না। আমি নিজে গ্রামের ভেতর থেকে এসেছি, ঘুরে দেখেছি, এখন সেখানে হয় দালান উঠেছে-নয়তো নতুন নতুন টিনের ঘর।'

নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা শুনলে অবাক হবেন, এক সময় আমি দেখেছি আমার এই অঞ্চলের মানুষের শালুক, কচু, মিষ্টি কুমড়া পোড়া; এগুলো তাদের খাবার ছিল। ভাত জুটতো না। আল্লাহর রহমতে সে কষ্ট এখন নাই। আমাদের পাটগাতি বাজার, সেখানে এবার কোরবানির ঈদের আগে, যদিও ঢাকা শহরে বসে, আমি জানি জিনিসের দাম বেড়েছে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এই কোরবানি ঈদের আগে ওই পাটগাতি বাজার থেকে ২০০ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। ওই মার্কেটেই ৫৫ ইঞ্চির টেলিভিশনও পাওয়া যাচ্ছে।'

গত ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।

গাজীপুরের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, খুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হন।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল