এস কে দোয়েল
করোনার অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে শখের বাটিক ও খাদির কাজ করে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন কুমিল্লার তানিয়া রহমান। স্বামী-সন্তান ও সংসার সামলিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন মিলিয়নিয়ার সফল উদ্যোক্তা। কুমিল্লার জনপ্রিয় পোশাক খাদি। যা ‘খদ্দর’ হিসেবেও পরিচিত। যুগযুগ ধরে এর চাহিদা চলে আসছে সারাদেশে। সময়ের চাহিদায় খাদি কাপড়ে শাড়ী, থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি অতুলনীয়। বিষয়টি মাথায় নিয়ে করোনার বোরিং সময়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তানিয়া। এ উদ্যোক্তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার শহরেই।
নিজে কিছু করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন কাজ। ড্রেস প্রীতি থাকায় ড্রেস নিয়েই কাজ করার পরিকল্পনা নেন তানিয়া রহমান। পরিকল্পনা থেকেই কাজ শুরু। বাটিকের ড্রেস, সুতি শাড়ি, সিল্ক শাড়ি, বাটিকের গাউন, বাটিকের গজ কাপড়, বেড কভার এবং খাদির পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করতে থাকেন।
বেশি দিন লাগেনি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। সৌখিন হাতের কাজের মান ভালো হওয়ায় বেশ প্রশংসা কুড়াতে থাকেন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের কাছ থেকে। নিজের নকশা করা চারু পণ্য বিক্রয় করতে স্বপ্ন দেখেন অনলাইন বিজনেসের। এক ছোট বোনের মাধ্যমে ফেসবুকের Women and e-commerce Forum (we) ই-কমার্স গ্রুপে যুক্ত হন।
উই গ্রুপে বাটিকের গজ কাপড়ে নিজস্ব একটি ডিজাইনে গাউন তৈরি করে তার ছবি পোস্ট করতেই ক্রেতাদের নজর কাড়েন এ নারী উদ্যোক্তা। এরপর আর পিছন তাকাতে হয়নি। প্রতিনিয়ত নিজের তৈরি পণ্য তুলে ধরতে থাকেন গ্রুপে। এতে করে বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। বাড়তে থাকে অর্ডার ও বিক্রয়। বেশিরভাগ ক্রেতারা সরাসরি উদ্যোক্তার কাছ থেকে নিয়ে থাকের পাইকারি দরে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মিলিয়নিয়ার হয়ে উঠেন তানিয়া রহমান।
উদ্যেক্তা তানিয়া রহমান জানান, আমার তৈরি পণ্য আমি অনলাইনে সেল করি। অফলাইনে সেল করি খুবই কম। এখন প্রতিমাসে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য সেল হয় তিন লক্ষ টাকা। এবার ঈদে আরও সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে উদ্যোক্তারাই আমার পণ্য বেশি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ অনেকেই বাটিক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী এবং সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর দিনে দিনে বাটিকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাটিকের অনেক ক্রেতা তৈরি হয়েছে। দেশের প্রায় অনেক জেলাতে আমার ড্রেস আমি পাঠাতে পেরেছি। অনলাইন অফলাইন মিলে আমার মোট সেল-১৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এরমধ্যে ফেসবুক উই গ্রুপে ১০ লাখ টাকার উপর সেল করেছি।
খাদি পাঞ্জাবি তৈরি প্রসঙ্গে তানিয়া জানান, যেহেতু আমি কুমিল্লার মেয়ে আর কুমিল্লার শহরেই থাকি। তাই এখানকার জনপ্রিয় বাটিক ও খাদি নিয়ে কাজ করাটা আমার জন্য খুবই সহজ হয়েছে। একটি খাদি পাঞ্জাবি তৈরি করতে বেশিদিন সময় লাগে না। খাদি কাপড় গজ হিসেবে তাতীদের থেকে কিনে নিয়ে এসে অভিজ্ঞ টেইলর দ্বারা সেলাই করিয়ে ফেলি। কোয়ালিটি ভেদে পাঞ্জাবির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম দিকে ইন্ডিয়ান,পাকিস্তানি নামিদামী ব্র্যান্ড কালেকশন নিয়ে কাজ শুরু করি। নতুন পেইজ, তার উপর সব দামী কালেকশন, সেল করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। পরে বাটিক নিয়ে কাজ করে বেশ ভালো করি। বাটিকের গাউন তৈরি করে ব্যাপক সারা পেয়েছি। বাটিকের সিল্ক কাপড় দিয়ে তৈরি করা লেহেঙ্গা মানুষ অনেক বেশি পছন্দ করেছে। বাটিকের সিল্ক কাপড়ে তৈরি করা লেহেঙ্গা সুন্দরের দিক থেকে কোনো অংশে ইন্ডিয়ান কোনো ড্রেস থেকে কম না।
একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তানিয়া জানান, উদ্যোক্তা জীবনে অনলাইনে প্রথম পাঠানো ড্রেসটি রিটার্ন এসেছিলো, যার জন্য পাঠিয়েছিলাম তিনি সেটা রিসিভ করেননি অজানা কারণে। তখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। একরাশ হতাশা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিলো। তবে সেখান থেকে সাহস সঞ্চয় ও অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করেই আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তানিয়া জানান, নারীর আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য একটি প্রশিক্ষণ নির্ভর প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন রয়েছে। এ জন্য বেশ টাকার প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ তৈরি করতে প্রণোদনা ও অন্যান্য সুবিধাদি দিচ্ছেন। আমাকে সহযোগিতা করলে আরো ভালো কিছু করতে পারবো।
সময় জার্নাল/এসএ