স্পোর্টস ডেস্ক:
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিত হারের পর সিরিজ বাঁচাতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া লিটন দাস। আগে ব্যাট করতে নেমে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের রেকর্ড গড়া জুটি ও ব্যাক্তিগত শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৩১ রান সংগ্রহ করে হাশমতউল্লাহ শহীদির দল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফগান বোলারদের বোলিং তোপে ১৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। ফলে ১৪২ রানের বড় জয়ে, ২-০তে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো শহীদির দল।
আফগানিস্তানের দেওয়া ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি টাইগাররা। কেননা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার দিন প্রথম ওভারটি মেডেন দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। তবে দ্বিতীয় ওভার করতে আসা মুজিবের ওপর লিটন দাস চড়া হন। টানা দুটি চার মেরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু এরপর ব্যাকফুটে গিয়ে ভুল করেন। আম্পায়ার গাজী সোহেল দেন এলবিডব্লিউ, লিটন সঙ্গে সঙ্গে সেটি রিভিউ করেননি। সময় নেন। তেমন আত্মবিশ্বাসীও মনে হচ্ছিল না তাকে।
সে যাত্রা টাইগার অধিনায়ক বেচে গেলেও। ইনিংসের ৫ম ওভার করতে আসা ফজলহক ফারুকি ওভারে আর রক্ষা পাননি লিটন। ফারুকির করা শর্ট লেংথের বলে তুলে মারতে গিয়েছিলেন লিটন, তবে টাইমিং করতে পারেননি মোটেও। শর্ট মিডউইকেটে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৫ বলে ১৩ করেন তিনি।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে আসা নাজমুল হাসান শান্তও বেশিক্ষণ উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি। লিটন ফেরার ৫ রানের ব্যবধানে মুজিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। করেন ৫ বলে ১ রান। এরপর টাইগার আরেক ওপেনার থিতু হয়ে থেকেও ফজলহক ফারুকির শর্ট লেংথের বলে বোল্ড হন নাঈম। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে কাটের মতো কিছু করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাঁহাতি ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে এই বাঁহাতি ব্যাটার ২১ বলে করেন ৯ রান ।
চতুর্থ উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দিচ্ছিলেন সাকিব ও তাওহীদ হৃদয়। তারা ৪০ রানের জুটি ভাঙতেই আরও তিন উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। চারে নামা তাওহীদ হৃদয় ৩৪ বলে ১৬ ও সাকিব আল হাসান ২৯ বলে ২৫ রান করে আউট হয়েছেন। দলে ফেরা আফিফ এদিন ও নিজেকে প্রমান করতে ব্যর্থ হন। গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন তিনি।এরপর মেহেদি মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিম। মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ৮২ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। নিজের সাবলীল ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি।
তবে দলীয় ১৫৯ রানে মিরাজের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৪৮ বলে ২৫ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ক্রিজে এসেই সাজঘরে ফিরে যান হাসান মাহমুদ। পরে দলীয় ১৮৯ রানে মুশফিক আউট হলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৮৫ বলে ৬৯ রান করেন মুশফিক। আর এতে ১৪২ রানের বড় জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে আফগানরা।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩৩১ রান তুলেছে আফগানিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪৫ রান করেছেন আফগান ওপেনার গুরবাজ। আরেক সেঞ্চুরিয়ান জাদরানও করেছেন ১০০ রান।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করেন দুই ওপেনার গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। শুরুর ১০ ওভারে দুজন মন্থর গতিতেই টানেন আফগানিস্তানকে। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তোলেন ৬৬ রান। এরপর বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা নেন। তিন পেসার ও দুই স্পিনার মিলে কিছুই ভাঙতে পারছিলেন না আফগানদের প্রতিরোধ।
এর মধ্যেই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান গুরবাজ। সাকিব আল হাসানের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ঠিক ১০০ বলে কাঙ্ক্ষিত শতকের দেখা পেয়ে যান তিনি। মাত্র ২০ ম্যাচ খেলা গুরবাজের এটি ছিল তার চতুর্থ শতক। এর কিছুক্ষণ পর আরেক ওপেনার ৭৫ বলে পা রাখেন পঞ্চাশের ঘরে। দুজনে ভর করে ওয়ানডেতে প্রথমবার দুইশ রানের উদ্বোধনী জুটি দেখে আফগানরা। ১৯৩ বলে আসে গুরবাজ ও জাদরানের দুইশ রানের জুটি।
ছুটতে থাকা এই জুটি শেষ পর্যন্ত থামান সাকিব। ৩৭তম ওভারে সাকিবের বলে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে এলবির ফাঁদে পড়েন গুরবাজ। ১২৫ বলে ১৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে থামেন তিনি। যা সাজানো ছিল তো ১৩টি বাউন্ডারি ও ৮টি ছক্কায়। পরের ওভারে অবশ্য ইবাদত এসে স্বস্তি দেন। তুলে নেন আফগানদের দ্বিতীয় উইকেট। ইবাদত হোসেনের শর্ট বলে পুল করে ফাইন লেগ সীমানায় মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উইকেটে নতুন আসা রহমত শাহ।
কিছুক্ষণ বাদে অধিনায়ক শাহিদিকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর দ্রুত আরও দুটি উইকেট হারায় আফগানিস্তান। কিন্তু তাতে লাভের লাভ হয়নি। এক প্রান্তে আফগানরা দ্রুত উইকেট হারালেও আরেক প্রান্তে থাকা জাদরান তুলে নেন শতক। তাতে পাহাড় সমান পুঁজি পেয়ে যায় আফগানিস্তান। সেঞ্চুরিয়ান জাদরান ১১৯ বলে ঠিক ১০০ রান করে থামেন মুস্তাফিজের বলে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৩১ রান সংগ্রহ করে হাশমতউল্লাহ শহীদির দল।
এমআই