সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়ার তারাইল চকের দৃষ্টিনন্দন তালগাছগুলোকে বিনাবাধায় খুন করা হয়েছে।
প্রকাশ্য দিবালোকের এই গণখুনের বিষয়টি কেউই দেখল না! ইউপি মেম্বার,চেয়ারম্যান,ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারি কেউ না,কেউ দেখলো না!!!
দিগন্তবিস্তৃত তারাইল চকের বিশাল হালটে তালগাছগুলো বড় হয়েছিল বহু বছর ধরে। বহুদূর থেকে দেখলেও চোখ জুড়াতো,পথচারীর ছায়া মিলতো প্রখর রোদে।
একসময় দীর্ঘতম এই হালট ফুটবল খেলার মাঠের মত প্রসস্ত ছিল। এই হালটে ফুটবল,ভলিবল,হাডুডু, দাড়িয়াবাঁধা, গোল্লাছুটসহ নানা খেলায় মেতে উঠতো গ্রামের তরুণ,কিশোররা।
হালটের এক পাশের জমির মালিকের লোভের জিহ্বা লক লক করেছে,তারা আস্তে আস্তে হালটের জমি দখল করে নিজের জমির আয়তন বাড়িয়েছেন,ক্রমশই সরু করে ফেলেছেন হালটের প্রসস্ততা।
তর সইছিল না তালগাছের সারি ঘেঁষা অপর প্রন্তের জমির মালিকের। তার জমির আয়তন বাড়ানোর পথে তালগাছগুলো বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
হিসাবটা সোজা এগুলোকে কেটে ফেলতে পারলে নিজের জমিটাকে আরও চওড়া করে নেয়া সহজতর হয়।
এতদিন সইলেও শেষপর্যন্ত ধৈর্য রাখতে পারলেন না। সামান্যতম চিন্তা না করে বর্বরের মত গাছগুলোকে কেটে সাবার করে ফেলেছেন।
তার দাবি গাছগুলো তার জমিতে তারই হাতে লাগানো। তাই তার ইচ্ছে হয়েছে তিনি কেটেছেন। কাটার যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন অদ্ভুত যুক্তি।
তালগাছগুলো নাকি পাশের জমিনের মাটির রস শুষে নেয় আর গাছের ছায়ার কারণে জমিতে ফসল কম হয়।
খোড়া যুক্তি। তালগাছের সারি চকের সোজা পূর্বরপশ্চিমে দাঁড়ানো বলে পাশের জমিনে সূর্যের ছায়া পরবার কোন সুযোগই নেই।
আর তালগাছের পানিশোষণ ক্ষমতার কারণে ফসলের জমিনে পানিশূন্যতা সৃষ্টির কোন প্রমান নেই। কারণ তালগাছের শিকড় মাটির অনেক গভীর থেকে পানি শোষণ করে।
এসবের বাইরেও আইনগত একটা বিষয় অাছে। সেটি হল আমাদের দেশের হালটগুলো সাধারণত খাসখতিয়ানভূক্ত ভূমি হয়ে থাকে।
আমার ধারণা এই হালটও খাস খতিয়ানভূক্ত জমি। তা না হলে এর প্রসস্ততা এবং দৈর্ঘ এত বেশী হত না।
এই হালটটা যদি খাসখতিয়ানভুক্ত ভূমি হয় তাহলে এই গাছকাটার কোন আইনসঙ্গত কোন অধিকারই পাশের জমির মালিকের নেই। যিনি কেটেছেন তার দাবি এ গাছগুলো তার হাতে লাগানো। তার বক্তব্য সত্য হলেও তিনি সরকারি অনুমতি ছাড়া গাছ কাটতে পারেন না। খাস জমিতে যে কেউ গাছ লাগাতে পারেন,কিন্তু একক সিদ্ধান্তে তা কাটতে পারেন না।
এই হালট খাস খতিয়ানভুক্ত কিনা শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের উচিত তদন্ত করে দেখা। যদি খাসখতিয়ানভুক্ত হয় তবে যিনি গাছ কেটেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
যিনি গাছ কেটেছেন তার বয়স আনুমানিক ৫০/৫৫। এই বয়সী একজন মানুষের লাগানো তালগাছ এত বড় হতে পারে না। কারণ তালগাছের বৃদ্ধির মাত্রা খুবই ধীরগতির হয়। সে হিসেবে এই তালগাছ তার হাতে লাগানো, একথা বিশ্বাস করা কঠিন।
সবচেয়ে বড় কথা নান্দনিক এক প্রাকৃতিক দৃশ্য চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল লোভের জিহ্বার কাছে পরাজয় মেনে।
এসজে/এমএম