সাইফ ইব্রাহিম, কুবি প্রতিনিধি:
ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
গত ৫ জুলাই ঝিনাইদহ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন শহরের অভিজাত ঝিনুক টাওয়ার আবাসিকের ভাড়াটিয়া সাদিয়া মল্লিক (২৯)। তাদের নামে এ ধরনের মামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যাম্পাসের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হয়রানির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ সকলের।
মামলার এজাহার সূত্রে, ইবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা সহ ছয়জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার বাদীসহ আসামীরা সকলেই ঝিনাইদহের ঝিনুক আবাসিক টাওয়ারের বাসিন্দা। ভুক্তভোগীর স্বামী বিদেশ থাকায় দীর্ঘদিন থেকে আসামীরা বিভিন্নভাবে তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। গত ২৭ মে রাতে এক নাম্বার আসামী তাকে রুমে একা পেয়ে অন্য আসামীদের সহযোগিতায় ধর্ষনের উদ্দেশ্যে জাপটে ধরেতে উদ্যত হলে তিনি চিৎকার করেন৷ এসময় এক নাম্বার সাক্ষী চিৎকার শুনে ছুটে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আসামীরা তার সাথে বাজে অঙ্গভঙ্গি করতো বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর মামলা করলে বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দেয়। নানা মহলে চলে সমালোচনার ঝড়। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার বাদী ও সাক্ষীরও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। মামলা করতে দেরি হওয়ার বিষয়ে জানতে বাদী সাদিয়া মল্লিকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মামলার প্রধান আসামী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বিষয়টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সত্য সামনে আসবেই৷ আমাদেরকে সামাজের চোখে হেও প্রতিপন্ন করার জন্যই এমনটা করা হয়েছে।'
অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, 'ওই মেয়ের (সাদিয়া মল্লিক) চলাফেরা আমাদের পরিবেশের সাথে যেতো না। এজন্য আমাদের ফ্লাটের পরিচালনা কমিটিতে কয়েকবার মিটিং হয় এবং তাকে এখানে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। একপর্যায়ে তিনি এখান থেকে চলে যান। পরে তার এক সহযোগী ও মামলার এক নম্বর সাক্ষীর প্রশ্রয়ে তিনি এ মামলা করেন। মূলত আমাদের প্রতি ক্ষোভের জায়গা থেকেই তিনি এটা করেছেন।'
১১ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে রেজওয়ানুল ইসলাম বাপ্পি নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার হলে বিষয়টি সকলের সামনে আসে। ওই পোস্টের নিচে রেনু নাজমুল নামের একজন লিখেন, ‘বাদীর পেশায় এইটা। গণ্যমান্য মানুষদেরকে তিনি টার্গেট করেন।’
জাহিদ ইসলাম লিখেন, ‘এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। অন্য কোনো কারণে এই সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আমি স্যার দেবাশীষ শর্মা কে ক্লাস সিক্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ অবধি চিনি। তার আজ অবধি কোনো খারাপ কাজে জড়িত হতে শুনিনি।’
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেন, ‘এই দুইজনই অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও সম্মানী ব্যক্তিত্ব। এটি ষড়যন্ত্র বলে আমার মনে হচ্ছে।’
নিয়ামুল হক সবুজ লিখেন, ‘আমার জানামতে কখনই এই ব্যক্তিদের দ্বারা এই কাজ সম্ভব নয়। এই ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ভদ্র, মার্জিত, বিনয়ী এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই ঘৃণিত অপতৎপরতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে এ বিষয়টি শেয়ার হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে আরো বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাব্বির আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ষড়যন্ত্র করে তাদের মানহানি করার একটা অপচেষ্টা। তারা দুজনের কেউই পর নারীর প্রতি আসক্ত নয়। মিথ্যা মামলা পরিহার সহ ঐ নারীর বিরুদ্ধে মান হানির মামলা করা উচিৎ।'
ইসমাইল হোসেন লিখেন, 'স্বার্থন্বেষী মানুষদের প্রতিহিংসা এতটা নোংরা হতে পারে! সুস্থ তদন্তের মধ্য দিয়ে অভিযোগকারীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।'
প্রদীপ অধিকারী লিখেন, 'ঈর্ষা হিংসা প্রতিশোধপরায়নতার একটা সীমা থাকা উচিৎ! এভাবে সম্মানিত মানুষের সম্মান নিয়ে টানাটানি যে বা যারা করে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের কঠোর শাস্তি হোক। এছাড়াও আরো অনেকে এ বিষয়টি মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন।'
সময় জার্নাল/এলআর