সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
বান্ধবীকে উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে দুই হলের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এবং এদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানায় জাবি চিকিৎসাকেন্দ্র।
গতকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুই হলের মধ্যবর্তী রবীন্দ্র চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছুড়াছুঁড়ি ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গত ১২ জুলাই রাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্র ও ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মহি উদ্দিন মিরাজ তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে নতুন কলা ভবনের নিচের ভেন্ডিং মেশিন থেকে পানীয় (জুস) ক্রয় করতে যায়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র ও প্রথম বর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি এবং তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিরাজের বান্ধবীকে উত্যক্ত করে। পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রাফিকে রবীন্দ্র চত্বরে পেয়ে মিরাজ ও তার বন্ধুরা জেরা করে। এসময় রাফির সাথে থাকা তার হলের বন্ধুরা তাকে বাঁচাতে পাল্টা তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
এ ঘটনার জেরে পরবর্তীতে, রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ঘন্টাব্যাপী ইট-পাটকেল ছুড়াছুঁড়ি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা তিনটি পটকা ফোটায়। সংঘর্ষ শেষে, ভোর সাড়ে চারটার দিকে উভয় হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যায়।
সংঘর্ষ চলাকালীন উভয় হলের শিক্ষার্থীদেরকে লোহার পাইপ, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও ব্যাট নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করতে দেখা যায়। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীকে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। সংঘর্ষ শেষে দুই হলের প্রবেশ পথগুলোতে স্ট্যাম্প, ব্যাট ও লোহার পাইপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা পরে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় দুই হলের প্রাধ্যক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
এ ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্র মিরাজ বলেন, গত বুধবার রাতে আমার বান্ধবীসহ নতুন কলা ভবনে গেলে রফিক-জব্বার হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার বান্ধবীকে উত্যক্ত করে। সে সময় তাদের নাম পরিচয় না জানায় কিছু বলিনি, কয়েকজনের মুখ চিনে রাখি। পরে গতকাল রাতে তাদের মধ্যে রাফি নামের একজনকে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পাই। সেদিন উত্যক্ত করার কারণ জানতে চাইলে রাফি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কয়েকজনের হাতাহাতি হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।
এ বিষয়ে জানতে রাফির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানান চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। তিনি বলেন, কয়েক দফায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে মেডিকেলে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শনিবার (১৫ জুলাই) ভোরে উভয় হলের দায়িত্ব-রত শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্য একটি জায়গার ঘটনা হলে টেনে আনায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই। যারা ছাত্র সুলভ আচরণ করছে না তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক মো. রনি হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রাথমিকভাবে একটা প্রতিবেদন জমা দেব। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক প্রতিবেদনের সাপেক্ষে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড থেকে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এমআই