ডা. ফাতিমা খান :
ভীষণ মানসিক অস্থিরতার মধ্যে সময় কাটছে।
ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ গুলো মোটেও সহনীয় না। পারতপক্ষে আমি খবরের ভিডিওগুলো প্লে করছি না, খবরের নৃশংস ছবিগুলো এড়িয়ে যাচ্ছি। যেখানে উচ্চস্বরে কথার আওয়াজই আমি সহ্য করতে পারিনা সেখানে নিষ্পাপ মানুষগুলোর উপর হায়েনার হিংস্রতা ও তাদের আর্তচিৎকার দেখার ও শোনার মত শক্তি আমার নেই। বিশ্বের মানচিত্রে স্বদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও মাসজিদুল আকসাকে রক্ষা করার যুদ্ধে অস্ত্রহীন মানুষগুলোর নির্ভীক প্রতিবাদ ও শাহাদাত অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ।
এদিকে দেশের খবরও বা ভাল কোথায়! করোনায় মৃত্যূ, লঞ্চডুবি, ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য মানুষের আপ্রাণ লড়াই, মৃত্যু, হাহাকার এসব তো নিত্য দিনের ঘটনা।
ফেসবুক ছেড়ে ছেলেদের কাছে এসে বসেছি। ওরা ঈদ কার্ড বানানোতে ব্যস্ত, আয়ানের স্কুল ছুটি চলাকালীন প্রোজেক্ট। ওদের চেয়ে আমিই বরং এসব কাজে বেশি আনন্দ পাই। ছেলে দুজনেরও আজ মন খারাপ, বেশ খারাপ ৷ আজ জেদ্দায় ঈদ। ওখানে সবাই কত মজা করবে, অথচ এখানে তাদের নাকি কোন আনন্দই নাই! দুজনই নস্টালজিক হয়ে বিগত ঈদগুলোর স্মৃতিচারণ করছে।
কার্ডে লাগানোর জন্য কাগজের গোলাপ ফুলের পাপড়িগুলো কাটছি আর ছেলেদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। জীবনের যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হয়। শোকর আর সবর হল জীবনে সাফল্যের দুটো মূল শর্ত। গত কদিন খবরে দেখা বিদ্ধস্ত ফিলিস্তিনের শিশুদের গল্প ওদের শোনালাম। আজ হোক বা কাল আকাশে ঈদের চাঁদ উঠলেও ওদের ঘরে কিন্তু ঈদ নেই। নতুন জামা আর টেবিল ভরা খাবার দূরে থাক ওদের জীবনেরই এক মুহুর্ত ভরসা নেই। তাদের প্রিয় মানুষদের মধ্যে অনেকেই চলে গিয়েছেন মহামহিমের জিম্মায় !
বললাম, আমাদের তো আল্লাহ সব নেয়ামত দিয়েছেন। কারো যদি মাথার উপর ছাদ থাকে, তিনবেলা পেট ভরে খাওয়ার মত খাবারের যোগান আছে, পরনের কাপড়চোপড় থাকে, সুস্থ শরীর আর নিরাপত্তা থাকে তাহলে সে পৃথিবীর অন্যতম সুখী মানুষদের তালিকায় পড়ে।
বড়জন আমার উপদেশ আর স্বান্তনা বাণী চুপচাপ শুনলেও ছোটজন একটু নড়েচড়ে বসল,
- আম্মু আমি একটু বলতে চাই । এদেশে কিন্তু যুদ্ধ চলছে না, ফিলিস্তিনে চলছে। হ্যাঁ আমি মানছি ফিলিস্তিনিদের সাথে সব আনফেয়ার হচ্ছে। কিন্তু ফর দা সেইক ওফ কম্প্যারিজন প্রথমে আমাদের আর ফিলিস্তিনের সিচুয়েশন সেইম হতে হবে, তারপর কম্পেয়ার করা যাবে । আর আমার তো খারাপ লাগে নানাভাই নানুমণির জন্য, অন্য কিছুর জন্য না। আমি জেদ্দা মিস করি। এখানে আই ফিল আনলাভড্ ! বাট স্টিল আমি থ্যাংকফুল!
বড়জন সায় দেয় - আম্মু, সেইম আমিও ফিল করি।
জাওয়াদ পুরো রমজান মাস দোয়া করেছে যেন আবার জেদ্দায় ফিরে যেতে পারে, রমজান মাসে দোয়া করলে যে কবুল হবে একমাত্র সে বিশ্বাসটাই তাকে এখনো আশাবাদী করে রেখেছে। ছেলেদের বলি, মন খারাপ হলেই মনকে বোঝাতে হবে, বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে।
আল্লাহর তায়ালা আমাদের আরেকটি রমজান মাস পূর্ণ করার তৌফিক দিয়েছেন, আরেকটি ঈদ পালনের সুযোগ দিয়েছেন- এর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে কি? এবার মুসলিম বিশ্বের অগণিত মানুষের বাড়িতে হয়ত ঈদ উদযাপন হবে না, ফিলিস্তিনের শিশুগুলো হয়ত ছবির শিশুটির মত এক হাতে পাথর অন্য হাতে দুধের ফিডার নিয়ে অপেক্ষা করবে শত্রুর মোকাবিলার। বাবার লাশের পাশে বসে কান্না আর আহাজারি করবে ওদের অনেকেই ঈদের দিনটাতেও। অথচ এত সংঘাতের মাঝেও তারা ঈদের সালাত আদায় করেছে।
ঈদের আগের রাত ও ঈদের দিনটাও দোয়া কবুলেও উত্তম সময়। বিশ্বের মজলুম মুসলিম উম্মাহ র জন্য আমাদের একটি দোয়া আজ খুব দরকার।
اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلامَ وَالمُسْلِمِينَ، اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلامَ وَالمُسْلِمِينَ، وَأَذِلَّ الشِّرْكَ وَالمُشْرِكِينَ وَدَمِّرْ أَعْدآءَ الدِّينِ وَاحْمِ حَوْزَةَ الإسْلامِ يَا رَبَّ العَالَمِينَ.
হে আল্লাহ!
ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থান উন্নত করুন এবং শিরক ও মুশরিকদের অবস্থানকে অবনতি দিন,
দ্বীনের শত্রুদের ধ্বংস করুন ও ইসলামের ভূমি রক্ষা করুন, হে বিশ্ব প্রতিপালক!
( ছেলেদের ঈদ কার্ড বানানো শেষ হল, আপনাদের জন্য ঈদের উপহার ❤️)