ডাঃ আহমেদ জোবায়ের :
শাহজালাল বিমানবন্ধরে তখন পোস্টেড বানসুরী এম ইউসুফ।
ভালবেসে মানুষ তাকে মিয়াভাই বলতো।
সরকারি অফিসাররা যে জনগনের সেবক, প্রভু নয় তা বানসুরী দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
একজন নীতিবান, দেশপ্রেমিক, সৃজনশীল মানুষ হলেন বানসুরী।।অদ্ভুত সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারেন তিনি।
দুর্নীতি নিয়ে তার বক্তব্য হলো
"দুর্নীতি হলো আগুনের মতো। আগুন হয় জ্বালিয়ে রাখতে হয়, না হয় নিভিয়ে ফেলতে হয়। জ্বালানো এবং নিভানোর মাঝখানে কম-বেশ বলে তৃতীয় কোন সূত্র নেই।"
শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তি যিনি শুণ্যের কোটায় নামিয়ে এনেছিলেন।
যাত্রী বান্ধব অনেক ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলেন, কমিয়েছিলেন যাত্রী হয়রানি।
যাত্রীদের লাগেজ থেকে জিনিসপত্র খোয়া যাওয়া কমে এসেছিলো।
ফ্লাইট লেইট হলে এয়ারলাইন্স কোম্পানিকে তাদের খরচে যাত্রীদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।
পচা বাসি খাবার চড়া দামে বিক্রি করার অপরাধে এক বিক্রেতাকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
১৫ টাকার পানি ৪০ টাকায় বিক্রি বন্ধ করেছিলেন।
প্রজেক্ট টুকিটাকির আওতায় অভিনব এক শাস্তির ব্যবস্থা প্রচলন করেছিলেন তিনি।।
সেই শাস্তি ছিলো বই পড়া এবং রিভিউ পরীক্ষা দিয়ে মুক্তি।
সাহিত্যের প্রতি কি অমোঘ টান থাকায় এমন সুন্দর চিন্তা তার মাথা থেকে এসেছিলো।
এমন জনবান্ধব অফিসারকে এইদেশে তোয়াজ করা হয় ভাবছেন?
বানসুরীর মাথার উপর সিলিং ফ্যান ছুটে পড়লো।
তাকে বিমানবন্দর থেকে সরাতে চাঁদা সংগ্রহ করে বিশ লাখ টাকার ফান্ড করা হয়েছিলো।
এয়ারপোর্টের বিভিন্ন সিন্ডিকেট তাকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠলো।
সিন্ডিকেট জয়ী হলো। বানসুরী ট্রান্সফার হয়ে আসলেন দুদকে।
এয়ারপোর্টতো দুই হাতে টাকা কামানোর আখড়া বানসুরী চাইলেও সিন্ডিকেটের একজন হয়ে কোটি টাকা কামিয়ে নিতে পারতেন।
তার সততা প্রশ্নাতীত ছিলো।
দুদকে আসার পর বানসুরী নিশ্চয়ই অসৎ হয়ে যাননি।
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাণা যেমন ছাড়বে না। তেমনি বানসুরী একদিন হাতেনাতে ৮০ লাখ টাকার ব্যাগ সহ ধরলেন সিলেটের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে।
এই ঘটনা ২০১৯ এর ২৮ জুলাই এর।
পার্থ গোপাল বণিকের স্ত্রী টাকার ব্যাগ পাশের বাসার ছাদে ফেলে দিয়েছিলেন।
যুগান্তরে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা পার্থ গোপাল বণিককে পেছন থেকে দুইহাতে ধরে আছেন বানসুরী এম ইউসুফ।
এই বণিক সিলেটের আগে চট্রগ্রামে পোস্টেড ছিলেন।
জেলের ভেতর বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা, সিন্ডিকেট মেইনটেইন করে, দুই নাম্বারি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
বানসুরীর পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান ও টাকা উদ্ধারের দেড় মাস পর ১১ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী তানিয়া ইশরাত গায়ে আগুন ধরিয়ে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করলেন।
তখন তাদের ফ্যামিলি থেকে বলা হলো তানিয়া ইশরাত একজন মানসিক রোগী ছিলেন।
তিনি আগেও আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছিলেন।
এই আগুনে ঝলসে আত্মহত্যা নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেই।
গতরাতে অনেকক্ষণ ঘুরলাম তানিয়া ইশরাতের আইডিতে যা এখনো একটিভ ফেসবুকে।
তানিয়া ইশরাতের আইডির পোস্টগুলো,তার কমেন্ট,তার স্যাটায়ার, তার লেখালেখি, তার রসবোধ, তার দেশপ্রেম,মানবিকবোধের প্রকাশ দেখার পর আপনার মনে খটকা লাগবে এমন একজন প্রাণচঞ্চল মানুষ কিভাবে মানসিক রোগী হতে পারেন?
আমাদের দেশে বেশিরভাগ আত্মহত্যা হয় বিষ খেয়ে,ফ্যানের সাথে ফাঁস দিয়ে।
গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বিরল এইদেশে।
সেই সময়ে ঘটে আরেকটি ঘটনা।
পঞ্চগড়ের জেলা কারাগারে পলাশ কুমার রায় নামের এক ব্যক্তি ২৬শে এপ্রিল ২০১৯ সালে পঞ্চগড়ের জেলা কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হন, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন।
অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ৩০শে এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
কারাগারের মতো একটি সুরক্ষিত স্থানে একজন বন্দীর গায়ে আগুন লাগার ঘটনা এই মধ্যে বেশ আলোড়ন তুলেছিলো সেই সময়ে।
কারাগারের ভেতরে একজন মানুষের শরীরে আগুন লাগার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কীভাবে পৌঁছালো তা নিয়ে প্রশ্ন জাগেনা?
কেন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পলাশ রায়?
পলাশ রায়ের ভাই প্রবীর কুমার রায় বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করার অভিযোগে ২৬শে মার্চ পলাশ রায়কে আটক করে জেল হাজতে পাঠায় পঞ্চগড় পুলিশ।
তবে প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করার মামলাটি সাজানো ছিল বলে দাবি করেন প্রবীর কুমার রায়।
তিনি বলেন, "আমার ভাই একটি রাসায়নিক তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের আইনি কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১৬ সালে ঐ প্রতিষ্ঠান তার নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে।"
তিনি আরও জানান, "এ বছরের ২৫শে মার্চ ওই ঘটনার প্রতিবাদে সে (পলাশ রায়) একটি মানববন্ধন করে এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকের অফিসে।"
এর পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার অভিযোগে তাকে আটক করে জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান প্রবীর রায়।
পলাশ কুমার রায়ের মত একজন আইনজীবী কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন।
তার কয়েকমাস পরে বানসুরী এম ইউসুফের স্ত্রী নিজ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেন যখন কিছুদিন আগে তার স্বামী একজন রাঘববোয়ালকে ৮০ লাখ টাকা সহ আটক করে।
পুরো ঘটনায় চিন্তার খোরাক পাবেন।
পুলিশের বক্তব্য শুনেই ফেবু জাস্টিস হয়ে যাবেন না।
ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে জানা উচিত।
বানসুরী এম ইউসুফের চাকুরী যায়নি।
যদি আত্মহত্যা না বলে তার স্ত্রীর মৃত্যু Pre planned murder বলে দাবী করতেন,তখন দেখতেন খেলারামের কত খেলা।।
বানসুরী বিচক্ষণ লোক। পোড় খেয়েছেন নিজের সততা বজায় রাখতে।
সে কারণেই স্ত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেননি।
তিনি নিজেও সিস্টেমে থেকে জেনে গেছিলেন সিস্টেম কিভাবে হয় এইদেশে।
হাজীপুত্রের মুখোশ উন্মোচন করার পর ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম র্যাব ছাড়লেন।
তার প্রমোশন হয়নি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন এইদেশে সততার জন্য শাস্তি পেতে হয়।