সুদেব রায়, কবি নজরুল কলেজ :
বাংলাদেশের ইতিহাসে পুরান ঢাকা নানা ইতিহাস,ঐতিহ্য ও পাহাড়ি খাবারের জন্য বিখ্যাত। টমটম বা ঘোড়ার গাড়ি পুরান ঢাকার একটি বিখ্যাত বাহন। রূপকথাতেও আছে এই ঘোড়ার গাড়ির নাম। রাজা-বাদশা, জমিদারদের আভিজাত্য প্রকাশ করার মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি।
সেই আভিজাত্য মুছে গেছে অনেক আগেই। এখন লড়াই অস্তিত্বের। এক সময় পুরান ঢাকার পরিচয় ছিল ঘোড়ার গাড়ির শহর হিসেবে। রাজধানীর কয়েকটি স্থানে যাত্রী টেনে কোনো রকমে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই বাহন।
একটা সময় এই এলাকায় প্রায় ৩০০ ঘোড়ার গাড়ি চললেও, বর্তমানে চলছে হাতে গোনা কয়েকটি। ঘোড়ার সংখ্যাও কমে এসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে তেমন কেউ যাতায়াত করেন না ঘোড়ার গাড়িতে।
বর্তমান সময়ে পদ্মা সেতু চালুর পর এর প্রভাব আরও বেড়েছে। এর ফলে লঞ্চগুলো তাদের রাত্রি হারিয়েছে তাই সদরঘাট যাওয়ার জন্য আগের মতো যাত্রী পাচ্ছে না ঘোড়ার গাড়িগুলো। এতে করে ব্যবসা অনেকটাই বন্ধের পথে। আগের মতো রোজগার নেই কোচোয়ানদের। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
তারপরও কয়েকটি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে । ভাড়া ৩০ টাকা। তবে বাস ভাড়া ১০ টাকা। য়ার ফলে বলা যায় শখের বসে ছাড়া খুব কম মানুষই ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করেন।
প্রতিদিন ঘোড়া গুলোকে খাওয়ানোর জন্য কিনতে হয় খাস, ক্ষুদ, কুড়া ও গমের ব্যবস্থা করতে হয়। আর এসব খাদ্য পণ্য চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হয়। বর্তমান বাজারে যা সবকিছুর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে ঘরাগুলোর পিছনে মাসিক ব্যায় বেড়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা ব্যয়ও রয়েছে।
বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশে ঘোড়া ও গাড়িগুলোকে বর্তমানে রাখা হয়। সেখানে গেলে ঘোড়াগুলো বেহাল তোর সাথে দেখা যায়। যত্নহীন ও পর্যাপ্ত খাবারে হবে ঘোড়াগুলো কোনোরকমে বেঁচে আছে। প্রাপ্তবয়স্ক ঘোড়াগুলোর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
অনেকটা পেটের দায়েই এই পেশায় জড়িত আছেন অনেকে। যাত্রীদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য দু একটি গাড়িতে এলইডি, কালারফুল লাইট, আরামদায়ক চেয়ার, মিউজিক সিস্টেমও রয়েছে। তবে এই গাড়ি গুলো মূলত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ডাক পড়ে।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, সর্বপ্রথম ১৮৫৬ সালের অক্টোবর মাসে এক আমেরিকান ঘোড়ার গাড়ি আমদানি করেন। ১০ বছরের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০টি। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে পরিবর্তন। এই ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় আর্মেনিয়ান ও স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ে এই পেশায়।
অনেকের পূর্বপুরুষ এই ব্যবসা করতো, এরি ধারাবাহিকতায় বংশানুক্রমে পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা এই পেশায় নিয়োজিত। তবে আগের মতো জৌলুস আর নেই। অনেকেই এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। আধুনিক রাষ্ট্রে, তারাও চেষ্টা করছেন ঘোড়ার গাড়িতে নতুনত্ব আনার। তাতেও লাভ হচ্ছে না কোচোয়ানদের। ফলাফল বিলুপ্তির পথে ঘোড়ার গাড়ি।
সময় জার্নাল/এলআর