আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইসলামাবাদের একটি বিচারিক আদালত তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পর লাহোরের জামান পার্ক থেকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। এরপর স্থানীয় কারাগার, রাজধানী হয়ে এখন তাকে রাখা হয়েছে পাঞ্জাবের কুখ্যাত এবং উচ্চ নিরাপত্তার অ্যাটোক কারাগারে।
শনিবার ইসলামাদের বিচারিক আদালত তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। এছাড়াও ৫ বছরের জন্য তাকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
এর আগে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল ইমরান খানকে বেলুচিস্তানের মাচ কারাগারে রাখা হতে পারে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাটক কারাগারেই থাকবেন তিনি।
পাকিস্তানের সিনিয়র পুলিশ অফিসার আলী নাসির রিজভি বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের পর দ্রুত রাজধানী ইসলামাবাদে নেওয়া হয়। পরে শনিবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে অ্যাটক কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পিটিআই প্রধানকে সড়কপথে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারের দিকে যাওয়ার সব রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে রাখে। অ্যাটক কারাগারের চারপাশে পুলিশ ও এলিট ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারা কর্মকর্তা বলেন, ইমরান খানের জন্য কারাগারে একটি ভিভিআইপি সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেলটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা নেই। তবে ভিতরে একটি ফ্যান, বিছানা এবং একটি ওয়াশরুম রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইমরান খান পাকিস্তানের গ্রেফতার হওয়া সপ্তম প্রধানমন্ত্রী। তবে অ্যাটক কারাগারে থাকা প্রথম সাবেক প্রধানমন্ত্রী তিনি। অ্যাটক কারাগার কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত। দোষী সাব্যস্ত এবং বিচারের অপেক্ষায় থাকা জঙ্গিদের এই কারাগারে রাখা হয়।
ইমরান খান পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়া সপ্তম সাবেক প্রধানমন্ত্রী। জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ১৯৭৯ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাই নওয়াজ শরীফ (যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন) দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের নির্বাসনে জেদ্দায় পাঠানোর আগে ১৯৯৯ সালে অ্যাটক দুর্গে বন্দী রাখা হয়েছিল। অ্যাটক কারাগার ও অ্যাটক দুর্গের মধ্যে দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। নদীপথ রক্ষার জন্য খাজা শামসুদ্দিন খওয়াফীর তত্ত্বাবধানে ১৫৮১-৮৩ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে অ্যাটক খুর্দে দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। কেপি প্রদেশের সীমান্তবর্তী সিন্ধু নদীর তীরে দুর্গটি অবস্থিত।
অন্যদিকে অ্যাটক কারাগারটি রাওয়ালপিন্ডি-পেশোয়ার রেলপথের ধারে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ শাসকরা ১৯০৫-০৬ সালে ৬৭ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করেছিলেন।
বৃটিশ শাসকরা এই কারাগারটিকে বেশিরভাগ বিদ্রোহে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করতে ব্যবহার করত। এটি এখন পাকিস্তানের একটি উচ্চ নিরাপত্তা কারাগার হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে সাধারণত কঠোর বিচারাধীন বা সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দীদের রাখা হয়।
সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সম্প্রতি ইমরান খানের জনপ্রিয়তা, বিশাল সমাবেশ করার সক্ষমতাসহ রাজনৈতিক বিষয়গুলো বিরোধীদের আতঙ্কিত করেছে।
২০২২ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি, সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, উসকানি এবং রাষ্ট্রদোহের মতো মামলা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের নির্বাচন থেকে সম্ভবত ইমরান খানকে দূরে রাখা হবে। তবে তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দল বা পিটিআই বলেছে যে তারা এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে।
তবে ইমরান খানের গ্রেফতার বা রায়ে সরকারের হাত নেই জানিয়ে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, আসন্ন নির্বাচনের সাথে ইমরান খানের গ্রেফতারের কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে সম্পদ গোপনের অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য প্রতিটি সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
মরিয়ম বলেন, আত্নপক্ষ সমর্থন না করে ইমরান খান আদালতের কার্যক্রম বিলম্বিত করার জন্য সময় ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়া এই মামলাটি থামাতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বারবার গিয়েছিলেন।
এমআই