মো: কামরুল হুসাইনঃ
❝গরীবের বউ সবার ভাবি❞ বাংলাদেশও তাই, আমাদের দেশের গ্রাম কিংবা শহরাঞ্চলে বড়, ধনী,স্বাবলম্বী পরিবারগুলো পাশের অর্ধস্বচ্ছল,সাবলম্বী হচ্ছে এমন পরিবারগুলোর অস্বাভাবিক কোন পরিবেশ দেখলেই, স্বাভাবিক করার জন্য সামাজিক দায়িত্ব মনে করে নাক গলায় কিংবা হস্তক্ষেপ করে আঞ্চলিক বাংলায় যাকে টাঙ্কি মারা নামেও ব্যঙ্গ করা হয়।
নির্বাচনকালীন সময়ে উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনী উত্তাপ শুরু হয় ক্ষেত্রবিশেষে অস্থিতিশীল উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও খুবই সন্নিকটে, যদিও বাংলাদেশে স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান।
কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, সন্ত্রাসবাদীরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে বহির্বিশ্বের নিকট বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল হিসেবে প্রদর্শন করতে। তাই উন্নত তথা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড দেশসমূহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ যাচাই করতে বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে, ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাস্ট্রপরিচালনা নীতিতেও তারা আস্থাশীল হওয়ার ইংগিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উন্নত দেশসমূহে কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষ যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ উচ্চশিক্ষার্থে, এরপর আছে ওয়ার্ক পারমিট, ভ্রমণ কিংবা ইনভেস্টর। যার ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় যায়, তাদের অধিকাংশ ই চায় সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে। প্রত্যেকটি দেশই চায় উক্ত দেশের অভ্যন্তরে যারা আছে সকলেই যেন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখুক। এসব দেশে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতিপত্র কারও জন্য একেবারে সহজ বিষয় বিশেষ করে দক্ষ কর্মী, ইনভেস্টর।
যারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পায় না, তাদের শেষ ভরসা রাজনৈতিক আশ্রয় তথা পলিটিকাল এসাইলাম। পলিটিকাল এসাইলাম জমা দেওয়ার মানেই বাংলাদেশ বসবাসের উপযোগী নয়, জীবনের নিরাপত্তা নাই, রাস্তায় বের হইলে গলা কেটে ফেলবে, বাক স্বাধীনতা নাই ব্লা ব্লা আরও কত কি! মোটকথা, রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য উক্ত দেশকে একরকম পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাস অনুপযোগী দেশ বানিয়ে দেওয়া হয়।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের খারাপ ইমেজের জন্য প্রধান কারণ রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন । এর জন্য ঢালাওভাবে বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করা হয়, আসলে কি তাই? নাকি সর্ষের ভেতরে ভূত! অবশ্যই সর্ষের ভেতরে ভূত লুকায়িত আছে কারণ যারা এসাইলাম আবেদন করে তারা নিজ কর্মগুণে বিদেশে স্থায়ী না হতে পেরে, স্থায়ীভাবে থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়। অতীতে সামরিক শাসন ও বিএনপি জমানায় দেশ উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদের আতুড়ঘর হয়ে গেছিল, দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তখন যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলত,তাদের জন্য পলিটিকাল এসাইলাম গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
২০০৮সালে দোর্দণ্ডপ্রতাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের উন্নয়নের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। বর্তমানে টানা ৩য় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে, অনুন্নত বাংলাদেশ থেকে এখন উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬শতাংশের উপরে, মাথাপিছু আয় ৩০০০ডলারের কাছাকাছি, পৃথিবীর ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩১সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ, ২০৪১সালে উন্নত তথা স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, ডেল্টা ২১০০প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। মোটকথা, বাংলাদেশকে একটি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে পরিণত করার পরিকল্পনা দৃশ্যমান।
বাংলাদেশে চাহিদামাফিক বিনিয়োগ না আসা, ট্যুরিজম বিকশিত না হওয়া, মানবাধিকার নিয়ে উন্নত দেশের প্রশ্ন তোলা প্রধান কারণ উন্নতদেশে হতভাগা বাঙালির রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন। সবার একই কথা বাংলাদেশে জীবনের নিরাপত্তা নাই। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন, বাংলাদেশে চাইলে কেউ আপনাকে কেউ গুলি করে হত্যা করতে পারবে না, রাস্তাঘাটে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। এককথায় বলা যায়, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশে জননিরাপত্তা বেশি।
পলিটিকাল ভায়োলেন্স সবদেশে আছে, এটা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত ততটা যুক্তিযুক্ত না। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন একটি দেশের পরিচ্ছন্ন ইমেজ ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। এর ফলে শান্তি-সৌহার্দপূর্ণ,সম্প্রীতির বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশ নামক কিছু মানবাধিকার সচেতন দেশ সোচ্চার হয়ে গেছে, অভিবাসীদের চাপসহ বিশ্ববাণিজ্যের টালমাটাল পরিস্থিতিতে উক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি একুবিংশ শতাব্দীর বর্তমান সময়ে সবচেয়ে অস্থিতিশীল। এর পাশাপাশি এদেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বে অস্বীকারকারী একশ্রেণীর উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদের দালাল রয়েছে যারা বিদেশি এম্বাসিগুলোতে নালিশ দিতে ব্যস্ত। এরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রোপাগাণ্ডা ও গুজব ছড়াচ্ছে।
তাই উন্নত দেশসমূহ প্রশ্ন তুলেছে, বাংলাদেশে কি মানবাধিকার সত্যিই লুন্ঠিত, জীবন কি হুমকির সম্মুখীন? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুখী, সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশে কি ঘটছে??? তারা অবাক,বিস্মিত! কারণ, এখানে গণতন্ত্রের উর্বরতা ছড়িয়ে আছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছে তারা অদক্ষ জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন অপরাধে দোষী, পলাতক আসামি কিংবা রাষ্ট্রদোহ তথা দেশবিরোধী কার্যক্রমে দেশপলাতক।
সময় এসেছে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জীবনযাত্রাকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিদেশি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসতেছে। তাদের প্রত্যেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য দেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা বিদেশি দরবারে অভিযোগ করে আসছে, তাদের উদ্দেশ্যও পরিষ্কার হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক এর নামে ডিকটেটরশীপ শাসনব্যবস্থাকে ২০১৩সালে শেখ হাসিনা সরকার জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করে সংবিধান থেকে উঠিয়ে দিয়েছে এবং সাংবিধানিকভাবেই বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। আমেরিকান প্রতিনিধি দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা টেরি এল এসলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন,"বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অযৌক্তিক।
লেখক: মো: কামরুল হুসাইন
সহ-সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।